রহিদুল খান, যশোর : যশোরের চৌগাছায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায় চলতি মওসুমে উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধানের চাষ হয়। যে সব জাতের ধান চাষ হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো বিআর-৫১, ৮৭, ৭৫ প্রতিক, লাল স্বর্ণ, কাশ্মিরী স্বর্ণ, ইন্ডিয়ান মিনিকেট ইত্যাদি।
ধানের ফলন সর্ম্পকে জানতে চাইলে উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের ধানচাষি সাইফুল ইসলাম, সাবের আলি সরদার, সাগর খান, টনিরাজ খান, সামছুল হুদা দফাদার, ইছাহাক আলী দফাদার, মিজানুর রহমান কাটু বিশ্বাসসহ আরো অনেকে জানান, চলতি আমন মওসুমে ধানে রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমন কমছিল যারফলে ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে।
উপজেলার বৃহৎ ধানচাষি হুদাফতেপুর গ্রামের মাওলানা আলি আকবর বলেন ধানের ফলন বেশ ভাল হয়েছে তবে তারপরও ধানচাষে কৃষকের কোন লাভ হবে না কেননা সার, কীটনাশক, লেবারসহ উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সকল উপকরণের দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে। খাদ্যশস্য উৎপাদন করেও কৃষক আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে পারছে না। প্রতিনিয়ত লোকসানের কারণে চাষীরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ধানচাষী বাবুল আক্তার বলেন, আগে নিজের সব জমিতে ধান চাষ করতাম কিন্তু অব্যাহত লোকসানের কারণে এখন অল্প জমিতে ধান চাষ করেছি এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। হাকিমপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান মুক্ত বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম খুব ভাল ফলন হয়েছে। উপজেলার পাশাপোল গ্রামের ধানচাষি মাস্টার মমিনুর রহমান বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম খুব ভাল ফলন হয়েছে। জামলতা গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম চমৎকার ফলন হয়েছে।
চৌগাছা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু জাফর বলেন, আমি প্রতি মৌসুমে চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করি চলতি আমন মৌসুমে খুব ভাল ফলন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তবে উৎপাদন খরচ অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে কিন্তু ধান বাজারে আসতে না আসতেই মন প্রতি প্রায় দেড়শো থেকে দুইশো টাকা পর্যন্ত দাম পড়ে গেছে।
ধান ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম বলেন, এ বছর চৌগাছা এলাকায় ধানের ফলন ভাল হয়েছে এবং ধানের মানও খুব ভাল একারণে আশা করছি চলতি মৌসুমে ধানের ব্যবসাও খুব ভাল হবে।
সিংহঝুলি গ্রামের চাতাল ব্যবসায়ী সেলিম মল্লিক, রবিওল ইসলাম, টাইফুর রহমান টাইমসহ আরো অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মৌসুমে উৎপাদিত ধানের মান খুব ভালো হয়েছে যার ফলে চালও ভাল হচ্ছে। তবে বর্তমানে বাজার কমতির দিকে যার ফলে চাষীদের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার সকল এলাকায় ধানের উৎপাদন খুব ভাল হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে ধানের ফলন এবং ধানের মান দুটোই ভাল হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করেছি উপজেলার সবটুকু চাষযোগ্য জমিতে আবাদ করতে। সেই হিসেবে আমার অফিসের সকল কর্মকর্তারা নিবিড়ভাবে কৃষকের সাথে মিশে নানা রকম পরামর্শ দিয়ে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে চলতি আমন মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আসছে বোরো মৌসুমের জন্য আমরা এখনই মাঠে নেমে পড়েছি।
প্রতিনিধি/এইচএ