শিরোনাম
◈ আদানির বকেয়ার সব টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ◈ মাঠে ছড়িয়ে থাকা লেবু ও  ডিম দে‌খে ম্যাচ খেলতে আসা ‌ক্রিকেটাররা ভয়ে পালালেন ◈ ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আপত্তি মোদি সরকারের! ◈ উনি ক্লাসে বাজে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন ◈ এবার নিউ ইয়র্ক মেয়রপ্রার্থী মামদানিকে গ্রেপ্তারের হুমকি ট্রাম্পের!, তীব্র প্রতিক্রিয়া ◈ বউ পেটানোয় শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ভিডিও) ◈ ক‌ষ্টের জ‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনা‌লে রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ দুপু‌রে এ‌শিয়ান কাপ বাছাই‌য়ে স্বাগ‌তিক মিয়ানমা‌রের বিরু‌দ্ধে লড়‌বে বাংলাদেশ নারী দল ◈ প্রথম ওয়ান‌ডে ম‌্যা‌চে মুশফিক-রিয়াদের জায়গায় খেলবেন লিটন দাস ও মিরাজ ◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়?

প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:১২ রাত
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০১:২৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আইএমএফ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী

মনজুর এ আজিজ : বাণিজ্য ঘাটতি, বাজেট ঘাটতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নেয়া প্রকল্পে অর্থায়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে চাওয়া ৪৫০ কোটি ডলার বা ৪২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে প্রথম দফায় ১৫০ কোটি ডলার বা ১৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে) পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা নিশ্চিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশকে মোট কত অঙ্কের ঋণ দেয়া হতে পারে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অক্টোবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।

সম্প্রতি ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে কয়েকটি বাংলাদেশী গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন আনন্দ। আইএমএফের নীতি ও পর্যালোচনা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর উমা রামকৃষ্ণান এসময় যুক্ত ছিলেন।

রাহুল আনন্দ বলেন, বাংলাদেশে এখন কোনো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নেই। বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশটির চিত্র ভিন্ন, বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সাথে আইএমএফ ঋণের শর্তের কোনো যোগসূত্র নেই বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। সেটা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৪ শতাংশ। যে কারণে দেশটির ঋণ খেলাপিতে যাওয়ার আশঙ্কা কম। শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না।

ওই কর্মকর্তা বলেন, তহবিল সংক্রান্ত নিয়ম ও পদ্ধতি অনুযায়ী আইএমএফ বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। আইএমএফ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে কর্মসূচির নকশা নিয়ে আলোচনা করছেন।

রাহুল বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল এ সম্মেলনে অংশ নেবে। সেখানে আইএমএফের সঙ্গে ঋণের ব্যাপারে আলোচনা হবে। এরপর সংস্থাটির মিশন বাংলাদেশ সফরে আসবে।

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিসহ অন্যান্য বহুজাতিক ও দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতার কাছ থেকেও ৪০০ কোটি ডলার চাইছে। দাতাদের কাছ থেকে এসব ঋণ পাওয়ার বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

এছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে ঋণ নেয়া প্রসঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সতর্ক করে অর্থমন্ত্রী বলেন, চীনের বিআরআই ঋণ নেয়ার আগে অন্তত দুবার ভাবা উচিত। কারণ, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির মন্থর গতি ঋণগ্রস্ত উদীয়মান দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়ায়।

মন্ত্রী বলেন, ঋণ গ্রহণের দুর্বল সিদ্ধান্ত ঋণগ্রস্ত দেশগুলোকে সংকটের দিকে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। সে জন্য চীনকে তাদের দেয়া ঋণ মূল্যায়নে মনোযোগী হতে হবে। চীনা সহায়তা নেয়া অবকাঠামো প্রকল্পগুলো কাক্সিক্ষত ফল দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তা শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট বাড়িয়েছে।

আইএমএফের তথ্য মতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল ৬২ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যার বেশির ভাগই বিশ্বব্যাংকের মতো বহুপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে নেয়া। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৯০০ কোটি ডলার বা ১৫ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়েছে জাপানের রাষ্ট্রীয় ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে।

এর আগে আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ ১০ বার ঋণ চেয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ঋণটি নেয়া হয় ১৯৭৪ সালে। আইএমএফের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঋণের জন্য ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশিবার গেছে। এই ১০ বছরে বাংলাদেশ পাঁচবার ঋণ নিয়েছে। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত কোনো ঋণ নেয়া হয়নি। এরপর ঋণ নেয় ২০০৩ সালে। সর্বশেষ ২০১২ সালে ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ। যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ কোটি ডলার।


বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নেয়ার জন্য আইএমএফ বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে। অতীতেও ঋণ দেয়ার সময় ভর্তুকি তুলে নেয়া এবং নানা ধরনের সংস্কারের শর্ত বাংলাদেশকে মানতে হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আইএমএফের ঋণ পেতে এবারও বাংলাদেশকে শর্ত হিসেবে অর্থনীতিতে কিছু সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বাজেট থেকে আলাদা করা এবং কৃষি ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো ইত্যাদি। ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফের আরোপ করা এসব সংস্কার কর্মসূচিকে স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম বা স্যাপ হিসেবে অভিহিত করা হয়।


সমালোচকদের মতে, ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে আইএমএফের এসব শর্ত মানতে দরিদ্র দেশগুলোকে এক রকম বাধ্য করে, যা অনেকটা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শামিল। অর্থনৈতিক দুর্দশায় দিশেহারা দেশগুলোর পক্ষে এ শর্তের বাইরে যাওয়ার উপায় থাকে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়