শিরোনাম
◈ ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ ◈ নতুন ২ জাতীয় দিবসে ছুটি থাকবে? যা জানাগেল ◈ অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায় জার্মানি ◈ জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে নিতে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ চলছে : মির্জা ফখরুল ◈ বাংলা‌দেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সূচিতে পরিবর্তন ◈ ভারতের নাগরিকত্ব নিতে চলেছেন পাকিস্তানের সা‌বেক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া? ◈ অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দিলে অ্যামেরিকার লাভ না ক্ষতি? ◈ দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে ৩ পরাশক্তি: সালাহউদ্দিন আহমদ ◈ শাপলা ছাড়া অন্য প্রতীক পছন্দ করা সম্ভব নয়, ইসিকে এনসিপি ◈ চীনা প্রযুক্তিই গেমচেঞ্জার’— ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পারফরম্যান্সে মুগ্ধ পাকিস্তান

প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৫২ দুপুর
আপডেট : ০৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কের চাপ পোশাক খাতে, রপ্তানি কমেছে ৫.৬৬ শতাংশ

মহসিন কবির: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির প্রভাবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি সেপ্টেম্বর মাসে ৫.৬৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বিশেষত নিটওয়্যার ও ওভেন খাতের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিতে দেরি করছে, ফলে রপ্তানি কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে রপ্তানি কমতে থাকলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মনে কিছুটা স্বস্তি আসে। এর মধ্যেই ক্রয়াদেশ কমতে থাকে। ক্রেতাদের মধ্যেও অস্বস্তি শুরু হয়। দুই পক্ষের এই অস্বস্তির কারণে একদিক অর্ডার আসছে না, অন্যদিকে বাড়তি শুল্কের অংশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, যা বহন করা ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। অন্যদিকে বাড়তি শুল্কের প্রভাব সব দেশের রপ্তানিতে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গেল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানি ছিল ৩ হাজার ১০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে তা কমে ২ হাজার ৮৩৯ ডলারে নেমে এসেছে। গতকাল রবিবার ইপিবি প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্য মতে, পোশাকের মধ্যে নিটওয়্যার ও ওভেন- দুই খাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি যেখানে ১ হাজার ৭২৯ মিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩০ মিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বরে নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি কমেছে।

৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ওভেন রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওভেন পোশাক রপ্তানি যেখানে ১ হাজার ২৮০ মিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৯ মিলিয়ন ডলারে।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পোশাক থেকে রপ্তানি আয় ৯ হাজার ৫১৪ মিলিয়ন ডলার ছিল; চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯৭০ মিলিয়ন ডলার। প্রথম তিন মাসে পোশাকের নিটওয়্যারে ৪ দশমিক ৩১ ও ওভেনে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ইপিবির তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। পরের দুই মাস আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে আগস্ট মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও সেপ্টেম্বরে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মাস হিসাবে জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৯৬২ মিলিয়ন ডলারের, আগস্টে ৩ হাজার ১৬৮ মিলিয়ন ডলার ও সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৮৩৯ মিলিয় ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, এক মাসের হিসাব দিয়ে বোঝা কঠিন। বাস্তব চিত্র পেতে হলে আরও কিছু সময় লাগবে। তিনি বলেন, শুল্ক এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ক্রেতা আগেই অর্ডার দিয়ে পণ্য নিয়েছে, যার কারণে গত দুই মাসে রপ্তানি বেড়েছিল। যার প্রভাব গত মাসে পড়তে পারে। অনেকে বাড়তি পণ্য নিয়েছে, যার কারণে অর্ডার কম আসছে।

এদিকে মোহাম্মদ হাতেম গণমাধ্যমকে বলেছেন, পোশাক রপ্তানি কম হওয়ার কারণে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়েও প্রতিফলিত হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। কারণ, বেশিরভাগ ক্রেতাই নতুন করে কোনো অর্ডার দিচ্ছে না। তারা এখন অতিরিক্ত ২০ শতাংশ রেসিপ্রোক?্যাল শুল্কের একটি অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

রপ্তানিকারকদের পক্ষে এই অতিরিক্ত চাপ বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, তারা এরই মধ্যে প্রাথমিক শুল্ক সমন্বয় এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবসহ বিভিন্ন ধরনের চাপে রয়েছে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য বাজারেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। কারণ, চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়