শিরোনাম
◈ ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ ◈ নতুন ২ জাতীয় দিবসে ছুটি থাকবে? যা জানাগেল ◈ অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায় জার্মানি ◈ জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে নিতে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ চলছে : মির্জা ফখরুল ◈ বাংলা‌দেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সূচিতে পরিবর্তন ◈ ভারতের নাগরিকত্ব নিতে চলেছেন পাকিস্তানের সা‌বেক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া? ◈ অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দিলে অ্যামেরিকার লাভ না ক্ষতি? ◈ দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে ৩ পরাশক্তি: সালাহউদ্দিন আহমদ ◈ শাপলা ছাড়া অন্য প্রতীক পছন্দ করা সম্ভব নয়, ইসিকে এনসিপি ◈ চীনা প্রযুক্তিই গেমচেঞ্জার’— ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পারফরম্যান্সে মুগ্ধ পাকিস্তান

প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:৪৩ বিকাল
আপডেট : ০৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থাই কৃষি অর্থনীতির গতি ফেরানোর মূল চালিকা শক্তি   

লিয়াকত হোসেন জনী, মধুপুর টাঙ্গাইল : বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি এখনো কৃষি নির্ভর । দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ শ্রমশক্তি কৃষিখাতে নিয়োজিত এবং জিডিপির প্রায় ১২-১৪ শতাংশ কৃষি থেকে আসে। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটি নানা সমস্যায় জর্জরিত, যার অন্যতম প্রধান হলো—দুর্বল ও অনিয়মিত বিপণন ব্যবস্থা। কৃষকের ঘামে সেচানো ফসল যখন ন্যায্যমূল্য পায় না, তখন তার শ্রম বৃথা যায়।

একদিকে উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে কৃষক লোকসানের মুখে পড়ছেন। এ অবস্থায় কৃষি অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে একটি সুষ্ঠু, সুসংগঠিত ও টেকসই বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থাই কৃষি অর্থনীতির গতি ফেরানোর মূল চালিকা শক্তি। এ বিষয়টির গুরুত্ব প্রদান অত্যাবশ্যক।
  
প্রতি মৌসুমেই আমরা দেখতে পাই, টমেটো, শসা, বেগুন কিংবা আলুর দাম মাঠে পড়ে থাকে ২-৩ টাকা কেজি, অথচ একই পণ্য শহরে বিক্রি হয় ৩০-৪০ টাকা কেজিতে। যেমন ২০২৪ সালের শুরুতে রাজশাহীর চারঘাটে কৃষকরা টমেটো বিক্রি করেছেন ১.৫০ টাকা কেজিতে, যেখানে রাজধানী ঢাকায় সেই টমেটোর দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা। মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে কৃষক যেমন ঠকছে, তেমনি ভোক্তাও প্রতারিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, অনেক সময় পণ্য বাজারজাতের আগেই পচে নষ্ট হয়ে যায়। কারণ গ্রামাঞ্চলে নেই পর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা, কোল্ড স্টোরেজ, কিংবা যথাযথ পরিবহনের সুযোগ। বর্তমানে দেশে প্রাপ্ত কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা কৃষকের চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এতে করে কৃষক বাধ্য হয় কম দামেই পণ্য বিক্রি করতে, নতুবা পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।

এ ছাড়া, বাজারে নেই স্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা। অনেক সময় কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ হয় এলোমেলোভাবে, যার ফলে কৃষক তার প্রকৃত মূল্য বুঝে পান না। কৃষকের কথা বলে এমন কৃষি মার্কেটিং সমবায়, পণ্যভিত্তিক সংগঠন কিংবা ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থা (agri e-commerce) এখনো কার্যকরভাবে গড়ে ওঠেনি। অথচ ভারতে “ই-নাম” (e-NAM) নামক ডিজিটাল মার্কেটপ্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষক সরাসরি বাজারে যুক্ত হতে পারছে এবং ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে।

সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থায় করনীয় দিকসমূহ :

  প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি : কৃষকদের মার্কেটিং কৌশল, দাম আলোচনা ও ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
♦ বাজার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন: স্থানীয় পর্যায়ে কৃষক বাজার (হাট), ডিজিটাল তথ্য প্যানেল ও মোবাইল অ্যাপ চালু করে কৃষকদের বাজারদর জানার ব্যবস্থা করা।
♦ সংরক্ষণ : প্রতিটি উপজেলায় কোল্ড স্টোরেজ   ও স্থানীয় পর্যায়ে উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন গুদামঘর স্থাপন জরুরী। 
♦ উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ  গ্রহণ করা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক  সড়ক নির্মাণ , কার্গো বিমান বৃদ্ধি ,সাগর ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যাবশক। 
♦ কৃষকদের পণ্যসামগ্রী  সরাসরি বিক্রির সুব্যবস্থা : মধ্যস্বত্বভোগী বাদ দিয়ে কৃষক যেনো ভোক্তার কাছে পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ই- কমার্স  প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলতে হবে।

কৃষি অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে দূর্বল  বিপণন  ব্যবস্থার উত্তরণে সরকারকে আধুনিক, কৃষকবান্ধব ও প্রযুক্তিনির্ভর লাগসই বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কৃষককে সরাসরি ভোক্তার সঙ্গে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে হিমাগার, কোল্ড স্টোরেজ, ট্রান্সপোর্টেশন সুবিধা এবং সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়াও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি।

যবনীকায় বলা যায় ,বাংলাদেশে কৃষি খাত শুধু অর্থনৈতিক গুরুত্ব নয়, বরং সামাজিক ও খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রেও অপরিহার্য। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে - এই সত্যকে সামনে রেখে একটি কার্যকর, স্বচ্ছ এবং কৃষকবান্ধব বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থাই  কৃষি অর্থনীতির গতি ফেরানোর  মূল চালিকা শক্তি । তাই কৃষকের অব্যাহত ক্ষতি একসময় কৃষি উৎপাদনকেই হুমকির মুখে ফেলবে। কৃষি অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে হলে বিপণন ব্যবস্থার চাকা ঘুরানোই হবে প্রকৃত পদক্ষেপ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়