শিরোনাম
◈ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আসছে দুর্বল পাঁচ ইসলামী ব্যাংক, গ্রাহকদের আস্থা ফেরানোর আশা ◈ ভুয়া দৃষ্টিভঙ্গি বনাম বাস্তব ঝুঁকি: বাংলাদেশিদের ইউরোপে আশ্রয় প্রশ্নে সংকট ◈ জনতার দাবি মৃত ব্রাহমা গরু জবাই, যা বললেন আলোচিত খলিল (ভিডিও) ◈ আফগা‌নিস্তা‌নের বিরু‌দ্ধে সহজ ম‌্যাচ ক‌ঠিন ক‌রে জিত‌লো বাংলা‌দেশ ◈ ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই ◈ বাংলাদেশে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ৩ লাখ ৫ হাজার,, কী পরিমাণ রাজস্ব মেলে? ◈ বাজারে ইলিশের চড়া দাম: ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে ১১ কারণ ◈ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার হতে পারে যেভাবে ◈ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮-৯ অক্টোবর ছুটি? যা বলছে মাউশি ◈ ‌ঝি‌লি‌কের ঝলক, পা‌কিস্তান‌কে উ‌ড়ি‌য়ে দি‌য়ে নারী বিশ্বকাপে দারুণ সূচনা বাংলা‌দে‌শের

প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:২০ রাত
আপডেট : ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:২৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাজারে ইলিশের চড়া দাম: ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে ১১ কারণ

সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এ বছর দেশের বাজারে ইলিশ মাছের দাম অনেক বেশি। জাতীয় মাছ হওয়ার পরও তাই ইলিশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। দেশেই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হওয়া ইলিশের দাম কেন এত বেশি সেই প্রশ্ন অনেকেরই মনে।  

যদিও সাম্প্রতিক এক সরকারি সমীক্ষায় ইলিশের দাম বাড়ার পেছনে ১১টি কারণ উঠে এসেছে। তবে এসব বিষয়ে সমাধানে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে ইলিশ এখন অনেকের কাছেই বিলাসী পণ্য।

ইলিশের চড়া দামের পেছনে যেসব কারণ চিহ্নিত করা গেছে তার মধ্যে দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি অন্যতম।

সম্প্রতি ইলিশের চড়া দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘বাজারে ইলিশের দাম কমাতে না পারাটা আমার কাছেও কষ্টের কারণ।’

বাজার ঘুরে জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে দেড় কেজি বা তারও বেশি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির মূল্য ছিল ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের গড় দাম ছিল ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। আর ৭৫০ গ্রাম থেকে এক কেজি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং আধা কেজি থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।

ইলিশের দাম বাড়ার কারণ নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষা চালিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে ইলিশের দাম বৃদ্ধির পেছনে ১১ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা; অবৈধ মজুত ও মুনাফাখোর সিন্ডিকেট; জ্বালানি তেল ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি; মাছ ধরার খরচ বৃদ্ধি; নদীর নাব্য সংকট ও পরিবেশগত সমস্যা; অবৈধ জালের ব্যবহার; দাদন প্রথার প্রচলন; বিকল্প কর্মসংস্থান; নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা; মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও রফতানির চাপ।

অভিযোগ রয়েছে, অধিক লাভের আশায় চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য তারা ইলিশের অবৈধ মজুত গড়ে তোলেন বলেও ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি বাণিজ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে কমিশন।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্টে দেড় কেজি বা তারও বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। ৭৫০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা, ৫০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে আকৃতি ভেদে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রি হলেও এ বছর ভারতে প্রতি কেজি ইলিশের রফতানি মূল্য ১ হাজার ৫৩৩ টাকা।

এদিকে সরকার নির্ধারিত রফতানি মূল্যের চেয়ে দেশের বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি হওয়ায় অনুমতি পেয়েও রফতানিতে অনীহা ইলিশ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর।

এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির জন্য দেশীয় ৩৭টি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদনের আওতায় মোট ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি করা যাবে। রফতানির এই প্রক্রিয়া গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যন্ত। তবে দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রফতানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

ট্যারিফ কমিশন তাদের প্রতিবেদনে সরাসরি পাইকার বা আড়তদারদের কাছে মাছ বিক্রির জন্য জেলেদের সমবায় সমিতি গঠন করার সুপারিশ করেছে।

সরবরাহ চেইনের ধাপ কমানোর জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি, ন্যায্য দামে ইলিশ বিক্রি নিশ্চিত করতে প্রধান শহরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে ইলিশের বিশেষ বিপণন কেন্দ্র স্থাপন, কোল্ডস্টোরেজ তৈরি, আড়তদার ও পাইকারদের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স, সরবরাহ ব্যবস্থার ধাপ অনুযায়ী যৌক্তিক মুনাফা বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।

এ বিষয়ে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেন, ‘সরেজমিন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইলিশ মাছ প্রায় শতভাগ দেশীয় পণ্য হলেও বাজারে এর দামের পেছনে কৃত্রিমতার সংযোগ রয়েছে। ইলিশ আহরণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা ডলারের ওঠানামার তেমন প্রভাব নেই। সমীক্ষায় চিহ্নিত মূল জায়গা হলো আহরণ পরবর্তী সময়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের নানা স্তর ও তাদের অতিরিক্ত মুনাফা।’

মইনুল খান জানান, মূলত দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি এর পেছনে বেশি ভূমিকা রাখছে। সমীক্ষায় এসব স্তর কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি দাদন ব্যবসায়ীদের মনিটরিংয়ের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে কমিশনের সুপারিশে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে, খরচ বিশ্লেষণ করে আকৃতি অনুযায়ী ইলিশের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে। এতে ইলিশের প্রান্তিক বিক্রেতা ন্যায্য দাম পাবে, অন্যদিকে ভোক্তাদের কাছে তা নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে মনে করে কমিশন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যেন সাশ্রয়ী দামে ইলিশ খেতে পারে, সে জন্য আমরা গবেষণা চালাচ্ছি। আসল সমস্যাটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

ইলিশের দাম প্রসঙ্গে ভোলার জেলে এমদাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইলিশের বাজার অস্থির করে দাদন ব্যবসা। আমরা নিরুপায় হয়ে দাদন নিতে বাধ্য হই। এরাই ইলিশের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। অধিক মুনাফার আশায় অবৈধ মজুত করে। এগুলো ঠিক করা গেলে ইলিশের বাজার স্থির হতে সময় লাগবে না।’  

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ। দেশের জিডিপিতে এটি প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জেলেরা বছরে ছয় লাখ টন ইলিশ ধরেন। এই মাছের বেশিরভাগই আসে সমুদ্র থেকে। উৎস: বাংলা ট্রিবিউন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়