শিরোনাম
◈ সাকিবের জন্য জাতীয় দলের দরজা সবসময় খোলা, বললেন বিসিবির মিডিয়া বিভাগের প্রধান ◈ অন্যায়কারী যেই হোক, প্রশ্রয় নয়: মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তারেক রহমানের ◈ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে কুমিল্লার ছিন্নমূল মানুষেরা, দেখার কেউ নেই ◈ জনবল ও অর্থ সংকটে ধুঁকছে কুমিল্লার ময়নামতি রেশমকেন্দ্র ◈ নির্বাচনের আগে যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে: উপ-প্রেস সচিব ◈ রাষ্ট্র সংস্কারে ঐকমত্য কতদূর? নানা প্রশ্ন ◈ ২ নেতাকে বহিষ্কার করেছে যুবদল, পুলিশ বলছে ‘আসামিদের পরিচয় মেলেনি’: সোহাগ হত্যাকাণ্ড ◈ পুরোনো রাজনীতিতে ফেরা অতটা সহজ হবে না: নাহিদ ইসলাম ◈ দোয়ারায় বিএসএফের গুলিতে ১জন নিহত ◈ সংস্কার ও বিচার চলমান প্রক্রিয়া, গণতন্ত্রের বিকল্প নেই: রাজশাহীতে ড. মঈন খান"

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২৫, ১২:০১ রাত
আপডেট : ১২ জুলাই, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

চালের দামে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস, অন্য নিতপণ্যে কিছটা স্বস্তি

মহসিন কবির: দেশে হুহু করে বেড়েছে চালের দাম। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে, আমদানিও করা হয়েছে পর্যাপ্ত কিন্ত কেন চালের দাম বাড়ছে এর উত্তর নেই কারো কাছে। মোটা থেকে মাঝারি বা মাঝারি থেকে চিকন সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। কেজি ৫ থেকে ৭টা পর্যন্ত বেড়েছে। বাড়তি দামের নেপথ্যে মজুতকারী ও করপোরেট সিন্ডিকেটকেই দুষছেন ক্রেতারা। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে সব চালের দাম। 

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার সকালে টাইল হল বাজারে এসেছিলেন চালসহ নিত্যপণ্য কিনতে। তিনি জানান গত দুই সপ্তাহ থেকে চালের দাম বেড়েছে। কেন বাড়ছে দোকারদারের কাজে জানতে চাইলে তারা জানান, আড়তে গিয়ে জিগান। আড়তদাররা বলেন মিল মালিকের কাছে গিয়ে জিগান। আমরা জানি না। বলে আমরা যাবো কোথায়। সরকারও এটা ভালোভাবে মনিটরিং করছে না। 

রেজাউলে মতোই একই সুরে কথা বললেন আরও বেশ কয়েকজন। তাদের সবার একই ক্ষোভ, একই আক্ষেপ। বোরোর ভরা মৌসুমের পাশাপাশি পর্যাপ্ত আমদানি এবং সরকারি মজুতে পর্যাপ্ত সংগ্রহ থাকার পরও কেন চালের দাম কমছে না।

জানা গেছে, দেশে গত এক বছরে ১৩ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। আমদানির পাশাপাশি বোরোর মৌসুমেও ভালো ফলন হয়েছে। তবুও বাড়তির দিকে সব ধরনের চালের দাম। যেখানে গত বছরের একই সময়ে চালের দাম কমতি ছিল—সেখানে এবছর একই সময়ে চালের দাম বেড়ে গেছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত বছরের ৯ জুলাই নাজির বা মিনিকেট চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭৮ টাকা। যেখানে এ বছর কেজিপ্রতি ব্যয় করতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

আরও বেশি বেড়েছে পাইজাম বা আটাশ চালের দাম। গত বছরের একই সময়ে এই জাতের চাল কিনতে প্রতি কেজিতে ব্যয় হতো ৫২ থেকে ৫৮ টাকা, সেখানে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি।

দাম বেড়েছে গরিবের স্বর্ণা বা মোটা চালেরও। গত বছরের একই সময়ে এ চালটির প্রতি কেজির দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, যা এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে।

সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবের থেকেও বেশি দাম পাড়া-মহল্লার দোকানে। গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার এবং বেশ কিছু পাড়া-মহল্লার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি, পাইজাম ৭৫ টাকা এবং মিনিকেট ৯০ টাকা কেজি।

সাধারণত মে মাস পর্যন্ত বোরো মৌসুম ধরা হয়। এ সময় থেকে নিয়ে পরবর্তী কয়েক মাস চালের দাম সাধারণত নিম্নগামী থাকে। তবে এবার দেখা গেছে, বোরোর মৌসুমের সময়েই জুন মাসেই চালের দাম বাড়তে শুরু করে। টিসিবির হিসাবে, বছরের ব্যবধানে মোটা চালের কেজি বেড়েছে ৮ টাকা। মাঝারি চালের দর কেজিপ্রতি বেড়েছে ১২ টাকা এবং সরু বা চিকন চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৭ টাকা।

কারওয়ান বাজারে মেসার্স জনতা রাইস এজেন্সির জিয়াউল হক বিভিন্ন ধরনের চাল বিক্রি করেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই সময়টায় সাধারণত চালের দাম কমতির দিকেই থাকে। তবে এবার একটু বাড়তির দিকে। আমরাই কিনছি বাড়তি দাম দিয়ে। আমাদের আর করণীয় কী আছে? বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানি চালের ব্যবসায় নেমে গেছে। তারাই এখন বাজারে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। ধান মজুত করে রাখে, চাল মজুত করে রাখে। আর এভাবেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়ানো হয়। প্রতি বস্তায় মাসের ব্যবধানে চালের দাম বাড়ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

রাজধানীর শ্যামবাজার বা কারওয়ান বাজার—প্রতিটি বাজারের চিত্রই অভিন্ন। সব ধরনের চালের বাড়তি দামে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মুখেই হাসি নেই। দাম বেশি থাকলে বিক্রি কম হওয়ায় এবং চাহিদা অনুযায়ী পাইকারদের কাছ থেকে চাল না পাওয়া বিক্রেতারাও অখুশি। আর হাসি নেই ক্রেতাদের মুখে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে এসেছে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন। বেসরকারি আমদানিকারকরা এনেছেন প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল। একই সময়ে ৬২ লাখ টন গমও আমদানি হয়েছে।

সরকারের কাছে গত ৮ জুলাই পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে ১৮ লাখ ৮ হাজার ৫৮৬ টন। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৯ টন চাল, ২ লাখ ১ হাজার ১৮২ টন ধান এবং ২ লাখ ২৫ হাজার ৪৩৮ টন গম রয়েছে; যা সন্তোষজনক বলে ধরা হয়।

বিশ্ববাজারে কমেছে চালের দাম: বিশ্ববাজারে যখন চালের দাম কমতির দিকে, ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশে তার উল্টো চিত্র। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে থাইল্যান্ড ৫ শতাংশ ভাঙা চালের প্রতি টনের গড় দাম ছিল ৫৮৬ ডলার, যা গত মাস জুনে নেমেছে ৪১৯ ডলারে। ভিয়েতনামের চাল ৫৪৩ ডলার থেকে কমে নেমেছে ৩৭৭ ডলারে। গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় চালের দাম কম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া চাল আমদানি করা যায় না। সরকারের অনুমতি নিয়েই চাল আমদানি করে। বিশেষ অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। শুল্কছাড়ের মেয়াদও শেষ। এ কারণে চাল আমদানি হচ্ছে না। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য বলছে, গত এক বছরে দেশের বাজারে চালের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।

রমজান মাস সামনে রেখে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে টিসিবির তথ্য উদ্ধৃত করে বিটিটিসি বলছে, দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। শুধু রমজানেই চাহিদা থাকে ৩০ লাখ টনের। বছরে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৬ লাখ ৯৫ হাজার টন। সেই হিসেবে দেশে চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ জানুয়ারি প্রতি কেজি মোটা চালের দর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৫ জানুয়ারি প্রতি টন চালের দাম ছিল ৫২৫ ডলার। এক বছর আগে ছিল ৬৫২ ডলার।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেছেন, চালের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুত আছে। এটা হলো সিন্ডিকেটের কারসাজি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছি; কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙতে পারিনি। তখন সরকারের আন্তরিকতা ছিল না, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙেনি।

বাজারে প্রতি কেজি আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, যা আগের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। অন্যান্য সবজির মধ্যে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, করলা ও বেগুন ৬০-৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে।

পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৪০-৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা কেজি দরে। মুরগির বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। গত সপ্তাহে যেখানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা এবং লাল লেয়ার ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির ডিমের বাজারেও কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১১২০ টাকায়, সাদা ডিম ১১০ থেকে ১১৫ টাকা এবং হাঁসের ডিম ২৫০ টাকা।

গরু ও ছাগলের মাংসের দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারেও মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়, রুই ৩০০-৫৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪৫০ টাকা, বেলে ৮০০-১২০০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০-৭০০ টাকা, চিংড়ি ৯০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৬০০ টাকা, শিং ৫০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৫০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ৭০০-১২০০ টাকা এবং চিতল ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়