এক বছরের হতাশা কাটিয়ে অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক খাত। বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রফতানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এই শিল্প। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া এবং অর্থবছরের শেষ মাসে রফতানি কমে যাওয়া একটি মিশ্র বার্তা দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একইসাথে সম্ভাবনা ও ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
মোট রফতানি আয়: ৩৯.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রবৃদ্ধি: ৮.৮৪% (আগের বছরের তুলনায়)।
নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা: ৪০.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ঘাটতি: ১.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তুলনা: ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে ৫.২২% ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সেই তুলনায় এই ঘুরে দাঁড়ানো অত্যন্ত ইতিবাচক।
এবারের প্রবৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে নিটওয়্যার বা বোনা পোশাক খাত।
নিটওয়্যার খাত: ২১.১৬ বিলিয়ন ডলার আয় নিয়ে এই উপখাতটি প্রবৃদ্ধি করেছে ৯.৭৩%। এর সাফল্যের কারণগুলো হলো:
দ্রুত উৎপাদন ও সরবরাহের সক্ষমতা।
পণ্যের বহুমুখীকরণ।
তুলনামূলক কম উৎপাদন খরচ।
ইউরোপের বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি।
ওভেন খাত: ১৮.১৯ বিলিয়ন ডলার আয় নিয়ে ওভেন পোশাক খাতও ৭.৮২% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমদানিনির্ভর ও সময়সাপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও এই খাতের অগ্রগতি প্রশংসার যোগ্য।
অর্থবছরের শেষ মাস, অর্থাৎ জুনে এসে রফতানির ঊর্ধ্বগতিতে হঠাৎ করেই ছন্দপতন ঘটে। এই এক মাসে রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৩১% কমেছে, যা পুরো বছরের অর্জনকে কিছুটা ম্লান করেছে।
নিটওয়্যার রফতানি (জুন): ৪.০৪% কমেছে।
ওভেন রফতানি (জুন): ৮.৯৬% কমেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এর সম্ভাব্য কারণ:
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাওয়া।
কাঁচামালের উচ্চমূল্য এবং ডলার সংকট।
বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার কমে আসা।
মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, পুরো বছরজুড়েই রফতানি আয় ছিল বেশ অস্থিতিশীল।
সেরা সময়: অক্টোবর, ডিসেম্বর ও মে মাসে রফতানিতে দুই অঙ্কের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। অক্টোবরে সর্বোচ্চ ২৪.৬০% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
খারাপ সময়: ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় স্থবির। এপ্রিলে মোট প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০.৪৪%, যা খাতের ভঙ্গুর অবস্থাকে নির্দেশ করে।
এই মিশ্র পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের কৌশল কী হওয়া উচিত?
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, "চ্যালেঞ্জপূর্ণ বৈশ্বিক বাজারেও বাংলাদেশের পোশাক খাত তার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। তবে জুনের নেতিবাচক প্রবণতা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।"
তার মতে, এই প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে হলে কয়েকটি দিকে নজর দেওয়া জরুরি:
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
দক্ষতা বৃদ্ধি: কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে।
নতুন বাজার: প্রচলিত বাজারের বাইরে নতুন রফতানি গন্তব্য খুঁজতে হবে।
সরকারি সহায়তা: নীতি সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে।
শেষ কথা: ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পোশাক খাতের ঘুরে দাঁড়ানো নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। তবে শেষ মুহূর্তের ধাক্কা বুঝিয়ে দিয়েছে যে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। বরং কৌশলগত পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এই সাফল্যকে টেকসই করা সম্ভব। উৎস” বাংলা ট্রিবিউন।