শিরোনাম
◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে? ◈ এবার থাইল্যান্ড থেকে ভারতগামী বিমানে ১৬ টি সাপ, এরপর যা ঘটল ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্তা ◈ স্ত্রীসহ তারিক সিদ্দিক ও বসুন্ধরার আকবর সোবহানকে দুদকে তলব ◈ চুন্নুসহ বহিষ্কার হচ্ছেন জাপা’র ৭ নেতা, মহাসচিব হচ্ছেন কে? ◈ স্ত্রীসহ সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামানের জমি জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ◈ আমি মনে করি না আমাদের সমাজে কোটিপতি থাকা উচিত: জোহরান মামদানি

প্রকাশিত : ৩০ জুন, ২০২৫, ০৮:১৬ রাত
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০২৫, ১২:৪৮ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

জামালপুর খনি থেকে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা 

মনজুর এ আজিজ : জামালপুর খনিতে আশানুরূপ গ্যাসের মজুদ নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখান থেকে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে ১২ বছর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমান। তিনি বলেন, কূপটি থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে হলে লম্বা পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। দীর্ঘ পাইপলাইনের বিনিয়োগ বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে কি-না, সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। তবে সেখানে আরও দু’টি উন্নয়ন কূপ খনন করে মোট ৩টি কূপ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলনের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

জানা যায়, জামালপুরের মাদারগঞ্জে অবস্থিত কূপটির গ্যাস স্তরের পুরুত্ব (১৪৪১-১৪৪৪.৫) মাত্র সাড়ে ৩ মিটার। ডিএসটির শুরুতে ১২০০ পিএসআই (প্রেসার বর্গ ইঞ্চি) চাপ থাকলেও পরে ১১০০ পিএসআই এর নিচে নেমে আসে। গ্যাস ফিল্ডটি আবিষ্কার করেছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেছেন, কূপটির নিকটতম পাইপলাইনের অবস্থান রয়েছে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দায়। যা কূপটি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটারের মতো দূরে।

ব্লক-৮ এর অন্তর্ভুক্ত জামালপুর পুরোপুরি নতুন অঞ্চল। আগে এই জোনে কূপ খনন করার কোন রেকর্ড পাওয়া যায় না। পরিমাণ কম হলেও এখানে গ্যাসের উপস্থিতি বাংলাদেশের সম্ভাবনার দার খুলে দিতে পারে। কারণ এতোদিন শুধু সুরমা বেসিন তথা, সিলেট থেকে শুরু করে দেশের পুর্বাঞ্চলীয় জেলা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ভোলাতে সীমাবদ্ধ ছিল গ্যাস ফিল্ড। নতুন ক্ষেত্র জামালপুরের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ডিএসটি (ড্রিল স্টেম টেস্ট) শেষ হয়েছে। এখন রিজার্ভ মূল্যায়নের কাজ চলমান রয়েছে। রিজার্ভ মূল্যায়ন শেষে সার্বিক অবস্থা জানা যাবে। এতো দীর্ঘ পাইপলাইন বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে কি-না! সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য হলে ফিল্ডটি হবে দেশের ৩০তম গ্যাসফিল্ড। আবিষ্কৃত ওই স্তর থেকে দৈনিক ৫ মিলিয়ন পর্যন্ত গ্যাস পাওয়ার আশা করছে পেট্রোবাংলা। ২০২৩ সালে দ্বীপ জেলা ভোলাতে দেশের ২৯তম গ্যাস ফিল্ড (ইলিশা), ২০২১ সালে জকিগঞ্জ ২৮তম গ্যাস ফিল্ড আবিস্কৃত হয়েছে। যদিও এখনও ওই দু’টির কোন ফিল্ড থেকেই গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে না।

আবিষ্কৃত ২৯টি গ্যাস ফিল্ডের মধ্যে ছাতক, কামতা, ফেনী ও সাঙ্গু পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে আর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কুতুবদিয়া, ভোলা নর্থ, জকিগঞ্জ ও ইলিশা থেকে। পেট্রোবাংলার বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী (১ জুলাই ২০২৩) বাংলাদেশে আবিষ্কৃত ২৯টি গ্যাস ফিল্ডে প্রমাণিত ও সম্ভাব্য (২পি) মিলে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ ছিল ২৮.৭৯ টিসিএফ। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২০.৩৩ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে, অবশিষ্ট মজুদ ধরা হয় মাত্র ৮.৪৬ টিসিএফ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোতে এক সময় দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হলেও এখন ১৮৫৬ মিলিয়নে নেমে এসেছে। মজুদ কমে যাওয়ায় পুরাতন কূপগুলোতে উৎপাদন আরও কমতে পারে। উৎপাদন কমে আসার জন্য গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে ঢিলেমিকে দায়ী করে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। বিগত কয়েক দশক ধরেই এই অবহেলা দৃশ্যমান।

১৯৯৫ সালের জ্বালানি নীতিমালায় বছরে ৪টি অনুসন্ধান কূপ খননের কথা বলা হয়। কোন সরকারেই তা পালন করেনি। দশটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সফল বলা হয়। সেখানে বাংলাদেশে সাফ্যলের হার তিন কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেয়েছে। ১০০টির মতো অনুসন্ধান কূপ খনন করে ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার করেছে। তারপরও গুরুত্বহীন থেকেছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম।

বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখছে সংশ্লিষ্টরা। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৯টি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তেল-গ্যাস সম্পদের সম্ভাবনা নিরূপণে কাজ করেছে। কিছু সংস্থা সারাদেশে এবং কিছু সংস্থা বিশেষ এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে।

২০০১ সালে ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) ও পেট্রোবাংলা, হাইড্রোকার্বন ইউনিট ও নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডাইরেক্টরেট সমীক্ষা পরিচালনা করে। ইউএসজিএস-পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪, গড় ৩২ দশমিক ১ ও সর্বোচ্চ ৬৫ দশমিক ৭ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ঘনফুট) গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে হাইড্রোকার্বন ইউনিট ও নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়ম ডাইরেক্টরেট সর্বনিম্ন ১৯, গড় ৪২ ও সর্বোচ্চ ৬৪ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়