শিরোনাম
◈ দীর্ঘদিন পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল ◈ শেখ হাসিনা পালানোর ব্রেকিং নিউজ দিয়ে পুরস্কৃত শফিকুল আলম ◈ পবিত্র আশুরা ৬ জুলাই ◈ বিএনপি ক্ষমতায় এলে সার্ককে পুনরায় সক্রিয় করা হবে: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ◈ চীন-পাকিস্তানকে নিয়ে ‘ভারতবিরোধী’ কোনও জোট করছে না বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হলে লাভ কার? ◈ ঋণের শর্তে মতবিরোধে আটকে ৪ বিলিয়ন ডলারের ৯ চীনা প্রকল্প ◈ টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর, ক‌তোটা আপন ক‌রে নি‌তে পে‌রে‌ছে বাংলাদেশ ◈ ট্রাম্পের অপমানের পর এবার স্যুটে দেখা মিললো জেলেনস্কির (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশের প্রতি ইরানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

প্রকাশিত : ২৬ জুন, ২০২৫, ০৮:২৮ রাত
আপডেট : ২৬ জুন, ২০২৫, ১১:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঋণের শর্তে মতবিরোধে আটকে ৪ বিলিয়ন ডলারের ৯ চীনা প্রকল্প

ঢাকা ও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা শর্ত নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায়— ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের ৪.০৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদনে বিলম্ব হচ্ছে। বিশেষ করে, ঋণের মুদ্রা নির্ধারণ ও সুদহারের বিষয়ে মতবিরোধের কারণে দুই পক্ষ এখনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি বলে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা। সূত্র:  টিবিএস নিউজ

গত দুই বছর ধরে চীন তার উন্নয়ন ঋণ ডলারে নির্দিষ্ট সুদের হার থেকে— ডলারের বাজারভিত্তিক সুদহার অথবা চীনা মুদ্রা ইউয়ানে (আরএমবি) সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

ইআরডি কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, আগামী ৩০ জুন শেষ হতে চলা চলতি অর্থবছরের মধ্যেই অন্তত একটি বড় ঋণচুক্তি সম্পন্ন হবে। কিন্তু, গত ১ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-চীন যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকেও শর্ত নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা 'চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চলে সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ' প্রকল্প। এই প্রকল্পটি মূলত চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতেই নেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে প্রকল্পটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ প্রকল্পে ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকার সংশোধিত বিনিয়োগ প্রস্তাব গত এপ্রিলে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

'ছয়টি নতুন জাহাজ সংগ্রহ' প্রকল্পটিও বিদায়ী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত বৈদেশিক ঋণ কর্মসূচিতে 'উচ্চ সম্ভাবনাময়' তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ প্রকল্পের জন্য ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব ছিল। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণের শর্তাবলী নিয়ে মতবিরোধ না মেটায়, চলতি অর্থবছরে চীন থেকে কোনো ঋণ চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।

চীন ডলার ঋণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সুদের হার বাদ দিয়ে, বাজারভিত্তিক হার প্রয়োগ করতে চাইলেও—ইউয়ান ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩-৩.৫ শতাংশ করতে চায়, যা অত্যধিক মনে করছে বাংলাদেশ। ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারভিত্তিক হার প্রয়োগ করলে ডলার ঋণের সুদের হার ৬ শতাংশের বেশি হয়ে যাবে, যা বাংলাদেশের জন্য অযৌক্তিক। বাংলাদেশ পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, চীন ইউয়ানে আরও ঋণ দিলে—সুদের হার ১ শতাংশের মধ্যে, এবং পরিশোধের মেয়াদ ১৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে হবে।

ইআরডি সূত্র বলছে, চীন ইউয়ান ঋণের ক্ষেত্রে পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে আগ্রহ দেখালেও—ডলার ঋণের ক্ষেত্রে একই নমনীয়তা দেখাচ্ছে না।

চীনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মার্চ মাসের সফর, সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক এবং এর ধারাবাহিকতায় ১ জুন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ের নেতৃত্বে ১৫০ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরে—ঋণের শর্তাবলী নিয়ে মতপার্থক্য কমার এবং অন্তত একটি প্রকল্পে অগ্রগতি হওয়ার আশা তৈরি হয়েছিল। তবে ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই দুই সফরের কোনোটিই কার্যকর কোনো অগ্রগতি বা সমঝোতা নিয়ে আসতে পারেনি।

২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আটটি প্রকল্পে চীনের সঙ্গে ৭.৯২ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি সই করেছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চীন থেকে বাংলাদেশ মোট ১৭.৫ বিলিয়ন ইউয়ান এবং ৭.২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে।

সর্বশেষ ঋণচুক্তি হয়েছে ২০২৩ সালের মে মাসে রাজশাহী ওয়াসার সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পে, যার পরিমাণ ২৭৬.২৫ মিলিয়ন ডলার। এরপর আর কোনো নতুন ঋণচুক্তি চূড়ান্ত হয়নি।

ইআরডি কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলছেন, অচলাবস্থা দ্রুত না কাটলে—আগামী অর্থবছরেও চীনা অর্থায়ন অনিশ্চয়তায় পড়বে। তবে আরও আলোচনার চেষ্টা চলছে।

ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, চীনের ঋণের শর্ত নিয়ে দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। "চীনের প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটের মুদ্রা ও সুদের হার সংক্রান্ত বিষয়গুলো দ্রুতই ওয়ার্কিং গ্রুপ পর্যায়ে সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি।"

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "সব দ্বিপাক্ষিক ঋণেরই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। তবে প্রকল্পভিত্তিক বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিলে চীনের বাইয়ার্স/সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটও লাভজনক হতে পারে।"

তিনি বলেন, "কিছু প্রকল্প যেমন রেল, সড়ক বা জ্বালানি—যেখানে উপকরণ চীন থেকে আমদানি করতে হয়—সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় চীন থেকে ৩%  বা ৩.৫%  সুদহারে আরএমবিতে (ইউয়ানে) ঋণ নেওয়া অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে।"

প্রকল্প গ্রহণের আগে হোমওয়ার্ক বা বিশ্লেষণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "যেমন কোন দেশ থেকে উপকরণ কেনা হবে, ঋণের শর্ত কেমন ইত্যাদি। যদি প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী চীন থেকেই মালামাল কিনতে হয় তবে চীনা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।"

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদের মতে, "শুধু রাজনৈতিক বা আগাম সিদ্ধান্তে চীনা ঋণ থেকে বিরত থাকা ঠিক হবে না। প্রকল্পের প্রয়োজন ও অর্থনৈতিক যৌক্তিকতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অর্থায়নের উৎস নয়, বরং প্রকল্পের ধরন ও চাহিদা অনুযায়ী অর্থায়নের ধরন নির্ধারণ করা উচিত।"

৯টি প্রকল্পে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায়

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চীনের ঋণ সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত — প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি), যা সাধারণত মার্কিন ডলারে দেওয়া হয় এবং গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল), যা দেওয়া হয় ইউয়ানে।

২০২৩ সালের শেষ দিকে, চীনের এক্সিম ব্যাংক মার্কিন ডলারে পিবিসি ঋণের ক্ষেত্রে—বাজারভিত্তিক সুদের হার প্রয়োগের প্রস্তাব দেয়। বর্তমানে মার্কিন ডলারের সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) প্রায় ৪.২ শতাংশের আশেপাশে থাকায়, অন্যান্য ফি মিলিয়ে সুদহার দাঁড়াবে ৬ শতাংশেরও বেশি, যা বাংলাদেশের জন্য অস্বাভাবিক ব্যয়বহুল বলে বিবেচিত হচ্ছে।

বর্তমানে ইআরডির ঋণ কর্মসূচিতে, চীনের ৪.০৬ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবিত ঋণসহ মোট ৯টি উন্নয়ন প্রকল্প তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হলো "চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চলের সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়ন" প্রকল্প।

এ তালিকায় আরও রয়েছে, মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, ডিজিটাল সংযোগ উন্নয়ন, টেলিটকের ৪জি নেটওয়ার্ক সারাদেশে সম্প্রসারণ এবং ঢাকার দাশেরকান্দি এসটিপি ক্যাচমেন্ট এলাকায় স্যুয়ারেজ সংগ্রহ ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্প।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়