মনজুর এ আজিজ : সারাদেশেই চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। তাছাড়া লাইন সংস্কার ও নানা কারণে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় মারাত্নক গ্যাস সংকট চলছেই। এরই মাঝে নতুন করে দুঃসংবাদ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। সাগরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ তিতাস অধীভুক্ত এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে বলে বুধবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তারিকুল ইসলাম খান।
তিনি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনালে মঙ্গল ও বুধবার এলএনজি কার্গো নোঙর করতে পারেনি। ফলে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের কম চাপ বিরাজ করছে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নোঙর করা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। জনসাধারণের এ সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ।.
উল্লেখ্য দেশে দৈনিক অন্তত ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৮১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে দৈনিক ঘাটতি থাকছে ১১৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এরপর আবার যান্ত্রিক ত্রুটি ও প্রাকৃতিক কারণে গ্যাস ঘাটতি হয়ে থাকে। ফলে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস সঙ্কট যেন এক নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকেই মারাত্নক গ্যাস সঙ্কট চলছে। অনেক এলাকায় চুলা জ্বলেনা। ফলে সিলিন্ডারের মাধ্যমে তাদের রান্নার কাজ সারতে হয়। তবে মাস শেষে ঠিকই বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমানে দৈনিক যে ২ হাজার ৮১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে-এরমধ্যে বিদ্যুতে ২ হাজার ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুটের জায়গায় ১ হাজার ১৯ ঘনফুট, সার কারখানায় ৩১৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি গ্যাস দিয়ে শিল্প, সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ার, বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক এবং চা কারখানার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এতে বাসাবাড়ি ও গ্যাস স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ না থাকায় প্রয়োজনের অর্ধেক গ্যাসও পাওয়া যাচ্ছে না। দির্ঘ লাইনে থেকেও গ্যাস না পেয়ে গাড়ির মালিকদের উম্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকায় দৈনিক অন্তত ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হতো। কিন্তু সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রতিদিন ১৫৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে দৈনিক অন্তত ৪৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি থাকছে। আর এর প্রভাব পড়ছে পুরো রাজধানী জুড়েই।
তিতাস সূত্র বলছে, এর আগে যখন তারা দৈনিক ১৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ পেয়েছে, তখন পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ইদানিং তাদের সরবরাহ আরও কমানো হয়েছে। এই কম সরবরাহের জন্য সংকটে পড়েছেন গ্রাহকরা।