মনজুর এ আজিজ : দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) দ্রুততার সাথে স্বাক্ষরের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এছাড়াও সমুদ্র অর্থনীতি, গভীর সমুদ্রে মৎস আহরণ এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে শ্রীলংকার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহায়তা বাংলাদেশের এখাতে দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন তিনি। মঙ্গলবার (১৭ জুন) শ্রীলংকার ‘হিল্টন কলম্বো রেসিডেন্স’ হোটেলে অনুষ্ঠিত সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সাথে সিলন চেম্বার অব কমার্স-এর বাণিজ্য আলোচনা সভায় এ আহবান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীলংকার শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সুনীল হন্দুন্নেত্তি এ।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সার্কভুক্ত দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্বেও, এখনও তা কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। তবে দুদেশের বেসরকারিখাতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশের লজিস্টিক অবকাঠামো, পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা, নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে শ্রীলংকার উদ্যোক্তাবৃন্দ এগিয়ে আসতে পারে। সেই সাথে বাংলাদেশ হতে ঔষধ, তৈরি পোশাক, পাদুকা, ইলেক্ট্রনিক্স, পাটজাত পণ্য আমদানির জন্য শ্রীলংকার উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুদেশের মধ্যকার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) দ্রুততার সাথে স্বাক্ষরের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া সমুদ্র অর্থনীতি, গভীর সমুদ্রে মৎস আহরণ এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে শ্রীলংকার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহায়তা বাংলাদেশের এখাতে দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে সিলন চেম্বারের চেয়ারম্যান ডুমিন্ডা হুলানগামুয়া বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সার্কভুক্ত দেশদুটোর মধ্যে বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রকৃত সম্ভাবনার প্রতিফলন ঘটায় না, তবুও সময় এসেছে পারষ্পারিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির। বাংলাদেশের বেসরকারিখাতকে অত্যন্ত ব্যবসা বান্ধব ও সহনশীল হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতে, বিশেষকরে পর্যটন এবং লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রীলংকার শিল্প ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সুনীল হন্দুন্নেত্তি বলেন, শুধুমাত্র বাণিজ্যিক সুবিধা নয়, আঞ্চলিক অগ্রগতির স্বার্থ অর্জনের জন্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে প্রচুর সম্ভবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। দুদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য টেক্সটাইল, ঔষধ, জাহাজ নির্মাণ এবং ডিজিটাল পরিষেবা প্রভৃতি খাত অত্যন্ত সম্ভবানাময়। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী শ্রীলংকার উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানে তাঁর সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, পাশাপাশি বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের শ্রীংলকায় বিনিয়োগে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানে সেদেশের সরকার বদ্ধ পরিকর। দূর্নীতি প্রতিরোধে শ্রীলংকান সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নানাবিধ সুবিধা প্রদান করছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, শ্রীলংকায় বাণিজ্য কাঠামোর সহজীকরণ, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা হ্রাসে দেশটি একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক হবে। এছাড়াও তিনি দুদেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যকার কার্যকর সংযোগ স্থাপনের উপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
শ্রীলংকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশের মত শ্রীলংঙ্কার অর্থনীতি প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচেছ। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত উদ্যমী এবং তাঁরা শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করে দুদেশের অর্থনীতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।
অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, তরুণ দক্ষ মানবসম্পদ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরদের জন্য অপার সম্ভবানার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এফটিএ স্বাক্ষরের উপর জোরারোপ করেন। সেই সাথে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, সমুদ্র অর্থনীতি, তথ্য-প্রযুক্তি, আর্থিক খাত, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় দুদেশের সমন্বিত বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠান চলাকালে, ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সাথে ৯০টি শ্রীংলকান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির মধ্যকার ২০০টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ নিজেদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান, যা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পাশাপাশি দুদেশের বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারকরণের লক্ষ্যে ডিসিসিআই এবং সিলন চেম্বারের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং সিলন চেম্বারের চেয়ারম্যান ডুমিন্ডা হুলানগামুয়া নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকার হাইকমিশনার ধর্মপাল বীরাক্কোদি, শ্রীলংকা-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি ড. আসাঙ্কা রত্নায়েক, ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান প্রমুখ।