শিরোনাম
◈ ইরানের প্রতি পাকিস্তানের পূর্ণ সমর্থন ◈ বৃহৎ ইসলামি জোট শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে কি? ◈ মোসাদের দুঃসাহসিক অভিযান: ২৭ সিন্দুক পরমাণু নথি চুরি ও বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যার বিস্ময়কর ইতিহাস ◈ সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বাড়াতে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ◈ ড. ইউনূস-তারেকের বৈঠক নিয়ে নতুন রাজনীতি, বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো ◈ অ‌স্ট্রেলিয়া‌কে হারি‌য়ে টেস্ট চ‌্যা‌ম্পিয়ন‌শি‌পের শি‌রোপা জিত‌লো দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকা ◈ ট্রফি থেকে প‌তৌ‌দির নাম মুছে ফেলায় মনকষ্ট বি‌সি‌সিআইর, সম্মানরক্ষায় ইংল্যান্ড বোর্ডকে অনু‌রোধ ◈ গভর্নরের লন্ডন সফরে কী পেলো বাংলাদেশ, যা জানাগেল ◈ মে‌রি‌লি‌বোন ক্রিকেট ক্লাব বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচের নিয়মে যে পরিবর্তন আন‌তে যা‌চ্ছে ◈ কোচ কাবরেরার উপর গরম দেখা‌লেন বাফু‌ফে সদস‌্য, চাই‌লেন তার পদত্যাগ, বিব্রত সভাপ‌তি

প্রকাশিত : ১২ জুন, ২০২৫, ১১:০১ দুপুর
আপডেট : ১৪ জুন, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা কতটা সম্ভব?

মহসিন কবির: আওয়ামী সরকারের আমলে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অবৈধ অর্থ দেশকে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী তিনটি সংস্থা। তবে কত অবৈধ টাকা ফেরত আনা যাবে সেটা এখন দেখার বিষয় বলেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। অতীতে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার হার খুবই সামান্য। 

বিদেশে বিপুল পরিমাণ পাচারকৃত অর্থ থেকে এই বছরের মধ্যে কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করব। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা চলছে।’ গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা।

নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী মনে করেন, অর্থপাচার হওয়া দেশ টাকা ফেরত দিতে না চাইলেও অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টায় তা ফেরত আনা সম্ভব। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘যে জায়গায় টাকা গিয়েছে তারা বেনিফিশিয়ারি। আন্তর্জাতিক আইন তাই তারা সহজে ছাড়বে না। আমরা অতিদ্রুত কাজ করছি। আশা করছি আমরা সফল হবো।’

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ২০২৪ সালে এক গবেষণায়  ৫০ বছরে বাংলাদেশে থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা বলে জানায়৷ আর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি (জিএফআই) বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৯ হাজার কোটি বা ৯০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে৷

বর্তমান সরকার পাচার হওয়া অর্থের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে খুবই তৎপর৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বার বার বলেছেন বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়েছে তা বিশ্বে নজীরবিহীন এবং একটি রেকর্ড৷ তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে গত ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শুধু ব্যাংক দখলের মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক দুই লাখ কোটি পাচার করা হয়েছে৷

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে নানা উদ্যোগ নিচ্ছি: এ কে এম এহসান

পাচারের অর্থ ফেরত আনতে এরইমধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আর পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিযুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের প্রক্রিয়া চলছে৷ আর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের  নির্বাহী পরিচালক এ কে এম এহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে নানা উদ্যোগ নিচ্ছি৷ কিন্তু ৫ আগস্টের পর কোনো টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়নি৷ এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ তবে রিজার্ভ হ্যাক করে যে টাকা নেয়া হয়েছিলো তার ৪০ ভাগের মতো এপর্যন্ত ফেরত এসেছে৷ আমরা তো আগেই এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করেছি৷ রিজার্ভের অর্থ বিভিন্ন সময়ে ফেরত এসেছে৷''

কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ জব্দ করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী তিনটি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে। সংস্থাগুলো যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশি অলিগার্ক, যাদের দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে দেশটির সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা অধিকতর জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহবান জানানো হয়। বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জবাবদিহিমূলক সুশাসনের পথে অগ্রযাত্রার অভূতপূর্ব সম্ভাবনার বর্তমান সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে।

রাষ্ট্র সংস্কারের চলমান উদ্যোগ, বিশেষ করে দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে পাচার হওয়া সম্পদ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাজ্যকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এর মাধ্যমে এমন জোরালো বার্তা দিতে হবে যে চূড়ান্ত বিবেচনায় অর্থপাচারকারীদের শুধু উৎস হিসেবে বাংলাদেশই নয়, গন্তব্য দেশ যুক্তরাজ্যেও কার্যকরভাবে জবাবদিহি করতে হয়।’

স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, ‘সময়ের অপচয় না করে যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ জব্দের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও অর্থ পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা জোরদার করা।

জানা গেছে, শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি লুণ্ঠনের শিকার হয়েছিল ব্যাংকিং খাত, যার কারণে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ১১টি দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। দেশে ৬১টি ব্যাংকের প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও হাসিনার খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে তাঁর আত্মীয়স্বজন, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও অলিগার্ক ব্যবসায়ী ও ‘রবার ব্যারনে’ পরিণত হওয়া লুটেরাদের পুঁজি লুণ্ঠনের অবিশ্বাস্য সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এতগুলো ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়