বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আজ আয়োজন করে একটি বই প্রকাশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বইটির নাম ৫০ বছরের বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি সমাজ ও সংস্কৃতি। বইটি সম্পাদনা করেন প্রফেসর রেহমান সোবাহান ও রওনক জাহান।
[৩] বইয়ে ড.আলী রিয়াজ, ড. মঞ্জুরুল ইসলাম. ড. সোহেলী নাজনীন, ড ফকরুল আলম, ড. সেলিম জাহান, মির্জা হাসানসহ বেশ কয়েকজন লেখক ও গবেষক তাদের লেখা প্রকাশ করেছেন।
[৪] লেখাগুলোর ওপর আলোচনা করেন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ও ফেরদৌসসহ অনেকেই।
[৫] সম্পাদক মতিউর রহমান বইয়ের আলোচনার পর তার বক্তব্যে বলেন, স্বৈরাচারী ধরনের সরকার চলছে দেশে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো গনতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চায় ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে এখন কথা বলারও কেউ নেই। তিনি রেহমান সোবহানকে আহ্বান জানান এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য জনগণকে আহ্বান জানাতে।
[৬] তিনি বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, গণতন্ত্র চাই, সংবাদপত্রের ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই।
[৭] ড. রিয়াজ বলেন, অনেকে মনে করেন ১৯৭৫ সালের পর দেশে ইসলামী রাজনীতি শুরু হয়েছে। এটি ঠিক নয়। এর আগেই ফরাজি আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলনেও ইসলামী রাজনীতি ছিল।
[৮] তিনি বলেন, ইসলামী রাজনীতি মানে ইসলাম পন্থিদের আন্দোলন নয়। এটি একটি মতবাদ হিসেবে গ্রহণ করা। এর সঙ্গে সামাজিক বিভিন্ন ধারা যুক্ত রয়েছে। এই ধারাকে রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। দেশের ৮৬ শতাংশ তরুণ এখন শরিয়াহ ভিত্তিক শাসন চায়।
[৯] আলোচনায় মির্জা হাসান বলেন, বাংলাদেশ ১৭ বছর সামরিক শাসনে ছিলো। ২৪ বছর ধরে দেশকে একটি রাজনৈতিক দল শাসন করছে। মোট ৪৩ বছর বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন। বাংলাদেশ একটি ডমিনেন্ট পার্টি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অনেকটা সিঙ্গাপুর বা রুয়ান্ডার মতো। আওয়ামী লীগ চেষ্টা করছে বিরোধী দল বিএনপিকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে। তাতে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে আগামীতে আওয়ামী লীগের বাইরে আর কারো ক্ষমতা গ্রহণের সম্ভাবনা নাই।
[১০] আলোচকগণ বাংলাদেশের ৫০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ২৫ বছরের আলোচনায় বলেন, দেশের মানব উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তা নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। তবে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়গুলো সংকুচিত হয়েছে বলে মতামত দেন।
[১১] ড. রিয়াজ তার প্রবন্ধে বিগত কয়েক বছর ও বিগত বছরের রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিরোধী মতের ওপর রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ব্যবহার করে নির্যাতনের বেশ কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
[১২] তিনি দেখান, বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপির নেতা ও কর্মীদের ওপর ১ লাখ ২৩ হাজার মামলা হয়েছে। ১ লাখ ৫৭জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৯ হাজার ৭জন আহত হয়েছে।
[১৩] তিনি আরো দেখান, এখন শুধু বিরোধী দলের ওপরেই নির্যাতন হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দিনে দিনে বাড়ছে। যার ফলে দেশের সকল নির্বাচনি ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে।
[১৪] তিনি দেখান, কর্তৃত্ববাদী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে আইন আদালতকে ব্যবহার করে।
[১৪.১] ড. ফখরুল আলম দেশের সংস্কৃতির বিষয়ে বলেন, আমরা একটি সামাজিক সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পুরোনো দ্বন্দ্ব ইসলাম না স্যেকুলারিজম। এটি নিয়ে চলছে সাংস্কৃতিক আলোচনা। আগামীতে এই দুই পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে। এই দুইয়ের মধ্যে সংমিশ্রন কিভাবে সম্ভব এটিই হবে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।
[১৫] ড. রেহমান সোবহান তার সমাপনি বক্তব্যে বলেন, গত ২৫ বছর বাংলাদেশের গার্মেন্ট ছিল অনেকটাই ভঙ্গুর। প্রবাসী আয় ছিল সিমীত। গত ২৫ বছরে তা একটি সিস্টেমে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ব্যাংক লুটের মতো ঘটনা এই অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে।
[১৬] তিনি দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য অনুসরণীয়। একসময় বাংলাদেশ থেকে ধারণা নিয়ে নেপালে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এখন এটিকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে। গণতন্ত্রের অবদমন হয়েছে। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে গেছে।
[১৭] বিচার বিভাগ কি সমভাবে বিচার করছে। পুলিশ কি সমভাবে আইনশৃংখলা রক্ষা করছে। এসব জায়গায়তো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারছে না।
[১৮] দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি হলেও ব্যবসায়ীরা নিজেরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে। তারা রাজনৈতিক মতামতের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। সমপাদনা: সমর চক্রবর্তী
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :