রহিদুল খান, যশোর: [২] তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সেই বিখ্যাত কবিতা ‘তালগাছ’। কবিতাটি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ানো হয়। তালগাছ বইয়ের পাতায় দেখলেও মাঠে-ঘাটে কেউ কেউ দেখেছেন আবার অনেকেই দেখেননি। কালের বিবর্তণে তাল গাছ বর্তমানে বিলুপ্তি প্রায়। যশোরের চৌগাছার ফুলশারা ইউনিয়নের রানিয়ালী গ্রামের রাস্তার দু’ধারে তাল গাছের সারি সৌন্দর্যবর্ধন করে যাচ্ছে।
[৩] চৌগাছা উপজেলার মধ্যে রানিয়ালী হাওলি সড়কে সবচেয়ে বেশি তালগাছের সারি চোখে পরছে। মালিগাতি মন্দির থেকে দুড়িয়ালি গ্রামের সংযোগ রাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে প্রায় কয়েক’শ তাল গাছে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক বৃক্ষপ্রেমী ও ভ্রমন পিয়াসী আসেন দৃষ্টিনন্দন এই তাল গাছ এক নজর দেখতে।
[৪] জানা গেছে, উপজেলার এলাকায় আগে প্রচুর বড় বড় তালগাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু মানুষের প্রয়োজনে সেইগুলো কেটে ফেলেন। প্রয়োজনের ত্যাগিদে এবং তাল গাছের প্রতি গুরুত্ব না থাকায় এলাকা থেকে তালগাছগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে অবহেলায় অযত্নে কিছু কিছু জায়গায় এখনো বেড়ে উঠছে এই তালগাছ গুলো। বর্তমানে এই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জেল আলীর ব্যাক্তি উদ্যোগে তাল গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
[৫] সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সময়ের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। আকাশে মেঘ জমলে মানুষ আতংক হয়ে পড়ে। উচু গাছ না থাকায় বজ্রপাতে মানুষের প্রায় মৃত্যু হচ্ছে। পরিবেশ থেকে তালগাছ হারিয়ে যাওয়ায় এ বজ্রপাত বেড়ে গিয়ে মানুষের মুত্যু হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তণ, মাটির ক্ষয়রোধ, অনাবৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করতে তালগাছ রোপনের গুরত্ব অপরিসীম। বজ্রপাত বেশী আঘাত হানে সাধারণত উচু গাছে। এ দিক থেকে তালগাছ বজ্রপাতের ঝুকি কমায়।
[৬] মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জেল জানান, পরিবেশের পরম বন্ধু তালগাছ রক্ষায় তালগাছ লাগান হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সেখানে কয়েক’শ তালগাছ রোপণ করেন তিনি। শক্ত-মজবুত আর দীর্ঘজীবী হওয়ায় শিশু, আম, জাম গাছের পরিবর্তে সাইলো সড়কের দুই পাশে এসব গাছ লাগানো হয়েছে। এটাই উপজেলার সবচেয়ে বড় সারি তালগাছের।
[৭] কৃষি অফিসার মোসাব্বির হুসাইন বলেন, তাল একটি ঔষধি গুণ সম্পন্ন ফল। গাছও খুবই শক্ত, ঝড়ে ভাঙে না। ফসলের শেল্টার বেল্ট হিসেবে কাজ করে। তালগাছ ভূমি রক্ষায় কাজ করে। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় ভূমিকা রাখে। ব্যাক্তি উদ্যোগে ’তাল বীজ রোপণের মধ্য দিয়ে এ এলাকায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি তাল উৎপাদন ও রস সংগ্রহের মধ্য দিয়ে এলাকার সামাজিক উন্নয়ন হবে। এ জন্যে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে তাল গাছ রোপনে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিনিধি/একে
