শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: মাসুমা আক্তার(১৯)। ভালোবাসা ও বসন্ত উৎসব পালনের লক্ষ্যে একটা বাসন্তী রঙের শাড়ি কিনেছে। শাড়ির রঙের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৪০ টাকায় এক গজ ব্লাউজের কাপড়ও নিয়েছে। সেই পর্যন্ত ঠিক ছিলো।কিন্তু যখনি ব্লাউজ সেলাই করতে দর্জির দোকানে যায় তখন তার চোখ কপালে! দর্জি একটা ব্লাউজের সেলাই মূল্য চাচ্ছেন ৪০০ টাকা।
সেলাই মূল্য এত বেশি কেন তা জানতে চাইলে দোকান মালিক মাসুদ মিয়া(৩৫)জানান- বর্তমানে সব কিছুর'ই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। সুতা,বুতাম,বক্রম,হুক থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরাও সব পোষাক তৈরিতে আগের চেয়ে কিছুটা মজুরী বেশি নিচ্ছি।
আবার যখন তাকে প্রশ্ন করলাম যে একটা ব্লাউজের মূল্য তো সর্বোচ্চ ৭০-১৫০ টাকা হতে পারে কিন্তু ৪০০ টাকা কেন? উত্তরে তিনি আবারো বললেন, কাপড় ও ডিজাইন অনুযায়ী সেলাই মূল্যের পার্থক্য হয়ে থাকে।তাছড়া বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে সেলাই কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকায় তখন সেলাই মূল্য কিছুটা বেশি রাখা হয়!
একই দোকানে থ্রি-পিচ সেলাই করতে আসা মাহমুদা বেগম(৩২) জানান, আগের থেকে সেলাই মূল্য মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে।ফলে তারা গার্মেন্টস থেকে রেডিমেড পোষাকের দিকে আপাতত বেশি ঝুঁকছেন।তিনি আরো বলেন,কিছুদিন আগের থ্রি-পিচ এর সেলাই মূল্য ছিলো ১০০-১৫০ টাকা।কিন্তু বর্তমানে তা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০-৫০০ টাকা।কাপড় বা ডিজাইন অনুযায়ী কখনো এর মূল্য আরো বেশিও রাখা হয় বলে তিনি জানান।
শুধু ত্রি-পিচ অথবা ব্লাউজের নয়।সব রকমের পোষাক তৈরিতে আজকাল বেশি মূল্য গুণতে হচ্ছে। ২০০ বা ২৫০ টাকা শার্ট-পিচ পাওয়া গেলেও তা সেলাই করতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। প্যান্টের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।
বর্তমান সময়ে প্যান্ট তৈরিতে কমপক্ষে ৫০০-৬০০ টাকা সেলাই মূল্য দিতে হচ্ছে।ফলে নিম্ন বা মধ্য আয়ের মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গার্মেন্টসে সেলাই সহ তৈরি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় রেডিমেড শার্ট পাওয়া গেলেও কাপড় কিনে তা সেলাই করতে গিয়ে গুণতে হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা।
পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কটি, বাচ্চাদের নিমা বা হাফপ্যান্টের ক্ষেত্রেও তাই। অনেক ক্ষেত্রে কাপড়ের চেয়ে সেলাই মূল্য অনেক বেশি দিতে হচ্ছে।
কেন এ অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি? সে সম্পর্কে জানতে চাইলে কুমিল্লা নগরীর খন্দকার হক টাওয়ারের দর্জি আসাদ মিয়া(৪০) প্রায় একই উত্তর দেন।তিনি জানান, কাপড় ইস্ত্রি করে কাটতে হয় এবং সেলাই শেষে আবার তা ইস্ত্রি করে ডেলিভারি দিতে হয় বলে বিদুৎ বিল বেশি আসে। তাছাড়া দোকান ভাড়া বেড়েছে ইদানীং। বেড়েছে সুঁই,সুতা, বোতাম, বক্রম, হুক,চক,কাটিং স্কেল থেকে শুরু করে সেলাই সম্পর্কিত সব কিছুর দাম। তাই তারা সব রকম পোষাক তৈরির ক্ষেত্রে সেলাই মূল্য আগের থেকে বেশি রাখছেন।
প্রতিনিধি/জেএ