আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্তে রাত হলেই ভারত থেকে নেমে আসে বন্যহাতির দল। এরপর শুরু হয় ফসলি জমিতে তান্ডব, নষ্ট করে দিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের আধা পাকা ধান। এতে নির্ঘুম রাত ও আতংকে দিন কাঠছে সীমান্তে বসবাসরত কৃষকদের। রাত জেগে ধানক্ষেত পাহাড়া দিচ্ছেন তারা। ভয়ে অনেকে কেটে ফেলছেন কাঁচা ধান।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া, দিগলবাঘ, কড়ইগড়া ও উত্তর রানীপুর সীমান্ত দিয়ে প্রায় একসপ্তাহ যাবৎ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দলবেঁধে প্রবেশ করছে বন্যহাতি। রাত ৮ টা থেকে ১১ টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি হাতি দলবেঁধে প্রবেশ করছে। ফসলি জমিতে তান্ডব চালিয়ে আবার চলে যাচ্ছে ভারতে। এভাবে প্রতিনিয়ত বন্যহাতি আসা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা স্থানীয়দের।
দিগলবাঘ গ্রামের হুমায়ুন কবির জানান, রাত হলেও ১৫-২০ টির মতো বন্যহাতি প্রবেশ করে বাংলাদেশ। কোন কোন দিন সন্ধ্যা হলেই চলে আসে। এসেই ধানক্ষেতে ধ্বংস তান্ডব শুরু করে। ফসল ছাড়াও ঘরবাড়িতে প্রবেশের আতংকে থাকি আমরা। সবাই দলবদ্ধ হয়ে মশাল জ্বালিয়ে ও একসাথে চিৎকার চেচামেচি করে হাতির পালকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। এখন পর্যন্ত অনেকের পাকা ধানক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছে।
নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ আবু হাসান জানান, হাতির ভয়ে আমরা কাঁচা ধান কেটে ফেলছি এবং হাতির আতংকে রাতে ঘুমানো যায় না।
কড়ইগড়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার এক একর জমির ধান পাকার আগেই কেটে ফেলেছি। হাতি নষ্ট করে দিচ্ছে পাকা ধান। নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক হারুনের দুই একর জমির ফসল ও দিঘলবাঘ গ্রামের আকিকুল ইসলামের পাঁচ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।’
এ ব্যাপারে দক্ষিন মাইজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির সরকার বলেন, ‘বন্যহাতি বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়ে প্রশাসন এবং বিজিবির সাথে আলোচনা করেছি। এলাকার লোকদেরকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।’
চারুয়াপাড়া ক্যাম্প কমান্ডার বিল্লাল হোসেন জানান, ভারতীয় বিএসএফ এর সাথে পতাকা বৈঠক করার মাধ্যমে আলোচনা করার প্রস্তুতি চলছে। বন্যহাতি আসা বন্ধের বিষয়ে কথা বলা হবে।
ধোবাউড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান বলেন, ‘সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা নিয়ে বিজিবির সাথে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও বন্যহাতীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয়দের সতর্ক থাকার আহবান জানানো হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, ‘হাতির আক্রমণের বিষয়ে অবগত রয়েছি। নিয়মিত সীমান্তে মনিটরিং করা হচ্ছে। বন্যহাতিকে কোন প্রকার মারধর করা যাবে না। তবে কিভাবে আক্রমন বন্ধ করা যায় সেই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
প্রতিনিধি/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :