শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৫:২১ বিকাল
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৫:২১ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার, নৌকার আদলে মঞ্চ

নৌকার আদলে মঞ্চ

আয়াছ রনি, কক্সবাজার : দীর্ঘ সাত বছর পর জনসভায় যোগ দিতে ৭ ডিসেম্বর (আজকে) কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উখিয়ার ইনানীতে  আন্তর্জাতিক নৌ মহড়া পরিদর্শন শেষে তিনি অংশ নেবেন সৈকতের লাবণী পয়েন্টের শহীদ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায়।

প্রধানমন্ত্রী সফর সূচি থাকছে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত  ইনানীতে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান, বিকাল ২টা ৪৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম উপস্থিত হয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্ভোধন করে ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন এবং বিকাল ৩ টা থেকে ৪ টা ৪৫ মিনিটে জনসভায় যোগদান করে জেলাবাসি উদ্দেশ্য ভাষণ প্রদান করে, সন্ধ্যা ৫ টায় কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হবেন।

কক্সবাজারের এবারের সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সহকারে নিয়ে জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ জানান, আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনায় ১০টি মেগা প্রকল্পসহ ছোটবড় ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরই মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, লিংকরোড় থেকে হলিডে মোড় সড়ক এবং মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ডে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছে জনগণ। চলমান প্রকল্প থেকে আরও ২৮টি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সমাপ্ত হওয়ায় এসব প্রকল্প ৭ ডিসেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, উখিয়ার ইনানীস্থ বঙ্গোপসাগরের পাড়ে আন্তর্জাতিক নৌ মহড়ায় অংশ নিতে কক্সবাজার আসবেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নিকটবর্তী লাবণীর পয়েন্টের শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

ইতিমধ্যে জনসভাস্থলের সার্বিক কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে, আজকের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। সভাস্থলের আশপাশসহ পুরো শহর তোরণ, ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।  সভাস্থলে প্রধানমন্ত্রীর মূল মঞ্চটি তৈরি করা হচ্ছে নৌকার আদলে। এর সাথে থাকবে ৪ টি উপ মঞ্চ। যেখানে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ অবস্থান নেবেন। একই সঙ্গে উদ্বোধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য থাকবে আলাদা মঞ্চ। প্রধানমন্ত্রী ভাষণ প্রচারের জন্য পুরো শহর ও আশপাশের এলাকায় লাগানো হচ্ছে দুই শতাধিক মাইক। অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য নেয়া হচ্ছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা। 

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, কেবল সভাস্থল শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম নয়; এর আশপাশের পুরো কক্সবাজার শহর হবে জনারণ্য। এবারের জনসভায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের জমায়েত হতে পারে। প্রাথমিকভাবে শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে তিন লাখের বেশি মানুষ অবস্থান নিতে পারবে। এছাড়াও সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, বাহারছড়ার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, হলিডের মোড়, শহীদ স্মরণী এলাকা, কলাতলীর হোটেল মোটেল জোন হয়ে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত মানুষ জমায়েত হবে। জনসভার ভাষণ প্রচারের জন্য পুরো এলাকাজুড়ে দুই শতাধিক মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রীর এবারের জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অন্য এলাকার চাইতে কক্সবাজারে বেশি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কক্সবাজারে রয়েছে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, মেরিন ড্রাইভ প্রশস্তকরণ, সাব মেরিনের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন, মহেশখালী এলএমজি টার্মিনালসহ অসংখ্য মেঘা প্রকল্প। ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারবাসী তার প্রতিফলন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর জন্য জনসভাস্থলে প্রস্তুত কক্সবাজার। 

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল আলম চৌধুরী জানান, শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকাল ১০টা থেকে মানুষ সমাগম শুরু হবে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অনেকেই আজ ৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার শহরে আসবে বলে জানিয়েছেন। সভায় দলীয় নেতারা সাড়ে ৪ লাখ মানুষের সমাগমের তথ্য জানিয়েছে। সেভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। 

কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম জানান, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে পৌর এলাকাজুড়ে উৎসবে পরিণত হচ্ছে। এদিন কক্সবাজার পৌরসভা থেকে লাখের অধিক মানুষ উপস্থিত হবে। একই সঙ্গে রামু, ঈদগাঁও থেকে আসবে আরও দেড় লাখ মানুষ।

এর বাইরে উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে আসা মানুষের নগরী হয়ে উঠবে কক্সবাজার। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও জনসভাস্থলসহ পুরো শহরের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর থেকে শহরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। এছাড়াও পুরো শহর সাদা পোশাকে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। 

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ কক্সবাজার এসেছিলেন। দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছরের বেশি সময়ের পর ৭ ডিসেম্বর আবার আসছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এক হাজার ৩৮২ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সমাপ্তের পর উদ্বোধনের তালিকায় থাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রামুতে বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কক্সবাজারে ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম উন্নয়ন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কুতুবদিয়ায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ও বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ এবং কলাতলী উদ্যান নির্মাণ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের আওতায় জোয়ারিনালা শেখ হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা ভবন, আব্দুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন ও উখিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক বর্হির্বিভাগ ভবন নির্মাণ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ হাড়িয়াখালী হতে শাহপরীরদ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ, প্রসস্থকরণ এবং শক্তিশালীকরণ, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কক্সবাজার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে পোল্ডার নং-৬৮ এর সি-ডাইক অংশের বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন রামু উপজেলাধীন কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউপি সড়কে বাকঁখালী নদীর উপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ, নবনির্মিত ৬ ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, রামু উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ, উখিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, বিমান বন্দর হতে নুনিয়ারছড়া সড়ক এবং ৪টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ, শহীদ সরণী সড়ক এবং তিনটি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ, সদর থানা হতে খুররুকুল পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণ, সুগন্ধা পয়েন্ট হতে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক এবং ৪টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ এবং কক্সবাজার প্রধান সড়ক হতে খরুশকুল রোড হয়ে তারাবনিয়ারছড়া পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়েছে।


প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ এলাকার জনসাধারণ সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। সড়কের উভয় পাশের বাতিতে রাতেও ফুটপাত ধরে পর্যটকদের আনাগোনা পাল্টে দিয়েছে নগরীর দৃশ্যপট।

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন, কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে গণপূর্ত বিভাগের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। যা উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ১৩৫ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পের মধ্যে ১০টি শেষ হয়েছে।

প্রতিনিধি/জেএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়