রহিদুল খান: [২] যশোরের চৌগাছা উপজেলায় বিশ হাজার হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান সোনালী রং ধারন করে বাতাসে দোল খাচ্ছে। ধানের শীষের সাথে স্বপ্ন দুলছে কৃষকের। কিন্তু হঠাৎ বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সোমবার সারা উপজেলা ব্যাপী মাঝারী ধরনের বৃষ্টিপাত অনেক গ্রামের কৃষকের কাটা ধানের জমিতে পানি জমিয়ে দিয়েছে। কৃষক এখন একবার তাকায় আকাশের দিকে আর একবার তাকায় মাঠের পাকা ধানের দিকে।
[৩] সোমবার বেলা ১১টার দিকে চৌগাছা উপজেলায় বৃষ্টি শুরু হয়। গোটা উপজেলা জুড়ে ঝুম বৃষ্টিতে মাঠে কেটে রাখা, কোথাও বেঁধে রাখা, কোথাও জালি দিয়ে রাখা ধানের ওপর দিয়ে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকের সর্বশান্ত হওয়ার উপক্রম। মঙ্গলবার ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
[৪] উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা ছিলো ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। তবে কৃষকরা ১৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ করেছিলেন। তবে কৃষকদের বক্তব্য কৃষি অফিস সঠিক তথ্য দিতে পারেনা। এ উপজেলায় বিশ হাজার হেক্টররেরও বেশি ধানের আবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছিলো। সারাদেশে গড়ে হেক্টরে যেখানে ৫.৮২ মেট্রিকটন ধান উৎপদন হলেই বাম্পার ফলন ধরা হয়। চৌগাছায় সেখানে হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হওয়ার আশা করছিলেন কৃষি কর্মকর্তারা। এখন বৃষ্টিতে সেই লক্ষঅর্জনও সম্ভব হবে না বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা।
[৫] উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের আলম দফাদার বলেন, চৌদ্দ বিঘা ধান করেছি। শ্রমিক না পাওয়ায় কাটতে পারিনি। ঠাকুরগাঁও থেকে শ্রমিক এসেছে সোমবার (৯ মে) সকালে। ধান কাটতে কাটতেই বৃষ্টিতে ভিজে সারা। তিনি বলেন, এরআগে মাঠে কারেন্ট পোকায় কেটে চাষীর ক্ষতি করেছে। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে না পেরে এখন বৃষ্টিতে ভিজে শেষ হয়ে গেলো। একই গ্রামের কাজল খান, সাবের আলী সর্দার, টনিরাজ খান, সরদার টিপু সুলতান,সাগর খান, সাইফুল ইসলামসহ আরো অনেকে জানান তারা এখন পর্যন্ত কোন ধানই বাড়িতে আনতে পারেননি।
[৬] রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা চৌগাছা শহরের একটি স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয় সাংবাদিক বাবুল আক্তার বলেন, রবিবার রাতে আমি ও আমার এক ভাই দুই জনের দুই বিঘা খেতের ধান বেঁধে জালি দিয়েছি। এখন সেই জালির ওপর দিয়ে পানির স্রোত যাচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষেতটি একটু নিচুতে হওয়ায় সেখানকার মাটি নরম ছিলো। সেজন্য কোনো গাড়ি না যাওয়ায় ধান বাড়ি নিতে পারিনি। তাছাড়া আবহাওয়া বার্তা ছিলো দশ তারিখের পর বৃষ্টি হবে। হঠাৎ সোমবার দিনভর যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে উপজেলার কমবেশি সকল কৃষকেরই ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার হুদাফতেপুর গ্রামের বৃহৎ ধানচাষি মাওলানা আলি আকবর বলেন আমি প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত এক বিঘা জমির ধানও বাড়িতে আনতে পারিনি। স্বর্পরাজপুর গ্রামের মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম সব বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।
[৭] এদিকে আবহাওয়া বার্তা রয়েছে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি এভাবে টানা দু’তিনদিন চললে কৃষকের সব স্বপ্ন মাঠেই মারা যাবে। ধান নষ্টের সাথে সাথে কৃষক গো খাদ্যের জন্য সংকটে পড়বে।
[৮] সিংহঝুলি গ্রামের কৃষক টনিরাজ বলেন, ধান কেটে রেখেছিলাম। কারেন্ট পোকার আক্রমণ, শ্রমিক সংকটের পর এই অসময়ের বৃষ্টিতে কেটে রাখা ধানগুলি সব শেষ। তিনি আরো বলেন সরকারি ভাবে বিভিন্ন উপজেলায় সাইলো নির্মাণ করে সরকার যদি ভিজে বা জমি থেকে কাটার সাথে সাথে ধান ক্রয় করে নিতো তাহলে কৃষকের ক্ষতি কম হতো। এছাড়া কৃষক গো-খাদ্যের জন্য ও চিন্তা করছে।
[৯] ভুক্তভোগি কৃষকরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের টানা বর্ষণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চৌগাছার বোরো ধান চাষ প্রায় একমাস পিছিয়ে যায়। ব্যপক ক্ষতি হয়, পেয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন সবজির। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দুই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ধানের ফলনও হয়েছিলো বাম্পার। তবে হঠাৎ এই বৃষ্টিতে কৃষকের সেই স্বপ্ন এখন মাঠেই জলে ডুবে রয়েছে।
[১০] এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্ব্স বলেন, এ সময়ের বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি তো হবেই। তিনি বলেন, তবে বৃষ্টি আর না হলে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ কমবে। সম্পাদনা : জেরিন