শিরোনাম
◈ বাজেটে দুর্বল পরিকল্পনা ও কর ব্যবস্থায় গলদ, সংস্কারে জোর তাগিদ সিপিডির ◈ রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের ডাক এনসিপির, তুলে ধরা হলো ৭ দৃষ্টিভঙ্গি ◈ মে‌হেদী মিরাজ‌কে পা‌কিস্তান সুপার লি‌গে খেলার অনু‌মো‌তি দি‌লো বি‌সি‌বি ◈ ভারতে পালানোর সময় বেনাপোলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সম্পাদক জামিল গ্রেফতার ◈ আমরা সংস্কার চাই,তবে সেটি অবশ্যই প্রয়োজন এবং সক্ষমতা অনুযায়ী হতে হবে : নজরুল ইসলাম খান ◈ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে সুখবর দিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ◈ ‘অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক’ পদে পদোন্নতি পেলেন ১২ পুলিশ কর্মকর্তা ◈ আ.লীগ ছাড়া নির্বাচনের প্রশ্নে উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি, বললেন ইসি মাছউদ ◈ নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি চলবে, কোনো মেয়াদ নেই

প্রকাশিত : ১৯ মে, ২০২৫, ১২:৪২ দুপুর
আপডেট : ১৯ মে, ২০২৫, ০৩:১৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ অভিযোগ পুলিশ সার্জেন্টের

ডেস্ক রিপোর্ট : দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম-১ (মেট্রো বিভাগ) এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (উত্তর) বিভাগে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট দ্বীন মোহাম্মদ দিনার। এছাড়া তিনি (সুবেল আহমদ) ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হয়ে দশম গ্রেডের এক পুলিশ কর্মকর্তার জন্য বরাদ্দ করা সরকারি ফ্ল্যাটে বসবাস করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

পুলিশ সার্জেন্ট দিনারের অভিযোগ, নগরের আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির সরকারি একটি ভবনের (ডি-৯) নিচে স্ত্রী তানহা আক্তার মিলির মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স (চট্টমেট্রো-ছ-৭১-০৭১৬) পার্কিং করা নিয়ে তাকে (দিনার) হেনস্থা ও হয়রানি করছেন দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমেদ।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমদ বলেছেন, ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট দ্বীন মোহাম্মদ দিনার তার স্ত্রীর নামে অ্যাম্বুলেন্স কিনে সেটির বডি পরিবর্তন করেছেন। যা সড়ক পরিবহন আইন বহির্ভূত। দিনারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই বিষয়টি দুদক টিম অনুসন্ধান করছে। সরকারি আবাসন পরিদপ্তর থেকে বৈধভাবে বরাদ্দ পাওয়া ফ্ল্যাটে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।

জানা গেছে, সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের বরাদ্দপত্র নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ওই ভবনে র (ডি-৯) একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন সার্জেন্ট দিনার। একই ভবনের ১৩-বি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমেদও।

ছয় আসন বিশিষ্ট অ্যাম্বুলেন্সটি দিনারের স্ত্রী তানহা আক্তার মিলির মালিকানাধীন। সেটি নগরের বেসরকারি একটি চিকিৎসাকেন্দ্রের রোগী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। রাতের বেলায় অ্যাম্বুলেন্সটি পার্কিং করে রাখা হয় ডি-৯ ভবনের নিচে।

ভবনের বাসিন্দারা জানান, অ্যাম্বুরলেন্সটি পার্কিং করে রাখার কারণে দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমদের ব্যবহৃত সরকারি গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৩৯৫৭) সরাসরি ভবনের লিফটের কাছে এসে দাঁড়াতে পারে না। ভবনের বাসিন্দা অন্যান্য কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার হেঁটে লিফটে উঠলেও দুদক কর্মকর্তা ব্যতিক্রম। তার গাড়িটি সরাসরি লিফট বরাবর এসে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু পুলিশ সার্জেন্ট দিনারের স্ত্রীর অ্যাম্বুলেন্সটির কারণে দুদক কর্মকর্তার গাড়িটি সরাসরি লিফট বরাবর দাঁড়াতে পারে না। এজন্য তিনি ক্ষুব্ধ।

সার্জেন্ট দিনার জানান, গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ভবনের দারোয়ান মবিন আহমদের কাছে অ্যাম্বুলেন্সটি কার জানতে চান। দারোয়ান জানালে তাকে ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে তাকে যোগাযোগ করার ‘নির্দেশ’ দেন দুদক কর্মকর্তা সুবেল। কথামতো যোগাযোগ না করায় এক সপ্তাহ পরে সার্জেন্ট দিনারকে কাছে পেয়ে ভবনের নিচে কেন মাইক্রোবাস (দুদক কর্মকর্তার দাবি অনুযায়ী) রাখা হয় তার ব্যাখ্যা চান দুদক কর্মকর্তা সুবেল। এরপর দিনারকে অ্যাম্বুলেন্সটি অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে বলেন, না হয় রাত ১২টার পর পার্কিং করতে বলেন সুবেল।

কিছুদিন পর অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি ডি-৯ ভবন পরিচালনা কমিটির সভাপতি নগর পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানকে জানান দুদক কর্মকর্তা সুবেল। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলার পর অ্যাম্বুলেন্সটি আরও ৭-৮ হাত ভেতরের দিকে সরিয়ে রাখেন দিনার।

বাসিন্দারা জানান, অ্যাম্বুলেন্স নামে রেজিস্ট্রেশন হলেও হলেও সেটির সাইরেন, হুইটার ও অ্যাম্বুলেন্স স্টিকার নেই। এ বিষয়ে সার্জেন্ট দিনার জানান, কয়েকমাস আগে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় স্থানীয় একটি গ্যারেজে অ্যাম্বুলেন্সটির মেরামত কাজ চলছে। দিনের বেলায় গ্যারেজে থাকলেও রাতের বেলা ডি-৯ ভবনেই নিচে গাড়িটি পার্কিং করে রাখেন তিনি।

অ্যাম্বুলেন্সটি ৭-৮ হাত ভেতরে সরিয়ে রাখার পরও ‘সন্তুষ্ট’ নন দুদক কর্মকর্তা সুবেল। একপর্যায়ে ‘মাইক্রোবাসটির’ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম সার্কেল কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিকভাবে জানতে চান তিনি। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আগের বাসার ঠিকানায় (নথি অনুয়ায়ী) চিঠি দিয়ে ২১ এপ্রিল অ্যাম্বুলেন্সসহ দিনারের স্ত্রীকে নতুনপাড়া কার্যালয়ে হাজির হতে বলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই চিঠি পাননি দিনার বা তার স্ত্রী।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ‘গাড়িটির’ বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা কৈফিয়ত চাওয়ায় বিআরটিএ এর এক কর্মকর্তা ফের চিঠি ইস্যু করতে সার্জেন্ট দিনারকে ৭ মে কল করে তার বর্তমান ঠিকানার (ডি-৯ ভবন) তথ্য নেন ওই কর্মকর্তা। এরপর সার্জেন্ট দিনার চিঠি নিতে সরাসরি চলে যান বিআরটিএ কার্যালয়ে। বিআরটিএ উপপরিচালকের দপ্তর থেকে চিঠি নিয়ে ফেরার মুহুর্তে দুদক, মেট্রো বিভাগের সহকারী পরিচালক এমরান হোসেনের নেতৃত্বে দুদকের চারজন সদস্য সেখানে ঢুকে পড়েন। ঢুকেই ‘মাইক্রোবাস’ মেরামতের জন্য বিআরটিএ এর অনুমতি নিয়েছেন কিনা, অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কেন বডির পরিবর্তন করেছেন সার্জেন্ট দিনারকে ইত্যাদি প্রশ্নবানে জর্জরিত করে দুদক টিম।

এছাড়া সার্জেন্ট দিনারের কাছে তার বিপি নম্বরও চায় দুদক টিম। এ সময় উপ-পরিচালকের দপ্তরে কিছু সাংবাদিকও ঢুকে সার্জেন্ট দিনারকে নানা প্রশ্ন করেন। মূলত ডি-৯ ভবনে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটার বিষয়টি উপস্থিত সাংবাদিকদের অবহিত করেন সার্জেন্ট দিনার। পরের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘অ্যাম্বুলেন্সকে মাইক্রোবাসে রূপান্তর’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।

‘কেউ যদি গাড়ির বডি পরিবর্তন করে সেটির দেখার এখতিয়ার বিআরটিএ’র। দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমদ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। নিজের গাড়ি নিয়ে সরাসরি লিফটের কাছে দাঁড়াতে না পারায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে  ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমাকে হয়রানি ও হেনস্থা করছেন। আমি অপরাধ করলে আমার কর্তৃপক্ষ আছে।’

দুদক কর্মকর্তা সুবেল বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৩৪৭টি অ্যাম্বুলেন্স রেজিস্ট্রেশন নিয়ে মাইক্রোবাসে রূপান্তর করার একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। সেই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সার্জেন্ট দিনারের স্ত্রীর গাড়ির বিষয়টি সামনে এসেছে। যা হচ্ছে তা কমিশনের নির্দেশেই হচ্ছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নই উঠে না।’

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ, চট্টগ্রাম সার্কেলের উপ-পরিচালক আইনুল হুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক ব্যক্তির তরফ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর সার্জেন্ট দিনারের স্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। বিআরটিএ কার্যালয়ে আনার পর তার অ্যাম্বুলেন্সটি আমাদের একজন পরিদর্শক দেখেছেন। সেটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে মাইক্রোবাসে রূপান্তর করা হয়েছে কিনা পরিদর্শকের প্রতিবেদন পেলেই জানা যাবে।’

ডি-৯ ভবনে অন্য পুলিশ কর্মকর্তার নামে বরাদ্দ পাওয়া সরকারি ফ্ল্যাটে বসবাস করার অভিযোগ প্রসঙ্গে আবাসন পরিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুনতাসির জাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সবশেষ বোর্ড মিটিংয়ে দীপক দেওয়ান নামে এক পুলিশ সদস্যের নামে ১৩-বি ফ্ল্যাটটি বরাদ্দ হয়েছিল। বদলি জনিত কারণে ওই কর্মকর্তা অন্যত্র চলে যাওয়ায় ভুতাপেক্ষিকভাবে ফ্ল্যাটটি দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমদকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’  

সুত্র : দেশ রুপান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়