ছাতক প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে (বিউবো) ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা (বাউবো) প্রকৌশলীর বক্তব্য নিতে গিয়ে রোববার দুপুরে তুপে মুখে পড়েন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার গণমাধ্যমকর্মীরা।
বিষয়টি ধামাচাঁপা দিতে এবং চাঁপে রাখতে সোমবার দুপুরে ছাতক বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ৭ জন গনমাধ্যমকর্মীসহ অজ্ঞতনামা আরও ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় অসংখ্য ভুক্তভোগী গ্রাহকরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইসলামপুর ইউনিয়নের গণেশপুরের বাসিন্দা জাহিদ হাসান মোহাম্মদ রুহেলকে গত ২৬ অক্টোবর আকস্মিক ভাবে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বকেয়া বিলের মামলায়। অথচ তাঁর নামে কোনো বকেয়া বিলই ছিল না। পরে জানা যায়, প্রকৃত বকেয়া বিলধারী হলেন অন্য একজন নাজমুল হুদা (মিটার নং ৪৪২৭৩০৭০), যার ২ লাখ ১৭ হাজার টাকার পাওনা ছিল। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অসৎ উদ্দেশ্যে জাহিদ হাসান রুহেলকে হয়রানি করা হয়েছে।
গত ৭ নভেম্বর মন্ডলীভোগ এলাকায় মিটার চেক করার নামে বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী স্থানীয়দের সাথে অসদাচরণ ও ভাংচুর চালায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আবুল খয়ের থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বিষয়টি রফাদফা’র উদ্যোগ নেন।
এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার গনমাধ্যমকর্মী রোববার দুপুরে উপজেলা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহীর কার্যালয়ে উপস্থিত হন। এসময় প্রকৌশলী প্রায় ৪০ মিনিট গনমাধ্যমকর্মীদের দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে বৈঠক করেন। পরে অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সন্তোষজনক কোন উত্তর না দিয়ে সকলের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ওই সময়ে নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে উপস্থিত সকল গণমাধ্যমকর্মীদের ভিডিও ধারন করতে থাকেন। এসময় দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি/উত্তরপূর্ব প্রতিনিধি শাহ্ মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানসহ অন্য সংবাদকর্মীরা কেন আপনি ভিডিও করছেন জানতে চাইলে, এসময় ওই কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ কোন কথা না বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে ফোন করে বলেন, এখানে আমার দপ্তরে ঝামেলা হচ্ছে, দ্রুত ফোর্স পাঠান। কিছু সময়ের মধ্যে থানা পুলিশ ওই দপ্তরে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি বিস্তারিত জানতে পেরে অনেকটাই হতবাক হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী রোববার দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের দপ্তরে অনাকাংখিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টি আপোষ নিস্পত্তির প্রস্তাব দিয়েছেন।
পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাসুক মিয়া বলেন, স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে আলী নামে এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মানববন্ধন করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীকে জরুরী প্রয়োজনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেন না। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধতণ কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি শাহ মো. আখতারুজজামান, দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি কাজি রোজাউল করিম রেজা, দৈনিক আমার দেশ প্রতিনিধি মোশারফ হোসেন ও দৈনিক মানবকন্ঠের প্রতিনিধি খালেদ মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের যে কোন তথ্য-উপাত্ত জানার গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার রয়েছে। কিন্তু এ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে যে অচারণ করেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
থানার উপ-পরিদর্শক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে ছাতক বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাউবো) সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো.আব্দুল কাদির বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে যে এমন অচারণ করার তো কথা নয়। এমন হয়ে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।