শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১৮ দুপুর
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নিখোঁজ দুই বোনের অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিওবার্তা, দিলেন ‘ধর্মান্তরিতের’ খবর

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা থেকে নিখোঁজ হওয়া সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের আপন দুই বোন অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) তাদের ভিডিও বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। তবে ঠিক কোথা থেকে তারা ভিডিও বার্তাটি প্রকাশ করেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নিখোঁজ দুই বোনের নাম স্নিগ্ধা রানি (২৪) ও পূর্ণিমা রানি (১৮)। তারা উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক শৈলেন্দ্রনাথ বর্মণের মেয়ে। স্নিগ্ধা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর পূর্ণিমা একই কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তাদের বাবা।

অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় দেখা যায়, নিখোঁজ দুই বোন স্নিগ্ধা ও পূর্ণিমা বোরকা পরা অবস্থায় পাশাপাশি বসে আছেন। তবে তাদের মুখে নেকাব নেই। প্রায় আড়াই মিনিটের ভিডিও বার্তায় বেশি সময় কথা বলেছেন বড় বোন স্নিগ্ধা। তারা উভয়ে ২০২২ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলে ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন।

ভিডিও বার্তায় সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন স্নিগ্ধা। তিনি বলেন, ‘আমি স্নিগ্ধা রানি। আমি ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ।’

পাশে বসে থাকা পূর্ণিমা রানি সালাম দিয়ে বলেন, ‘আমি পূর্ণিমা রানি। আমি ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।’

এরপর স্নিগ্ধা বলেন, ‘আমরা ১৬ সেপ্টেম্বর বাসা থেকে নিজ জিম্মায় বের হয়ে আসি। এর কারণ, অনেকে বলতে পারেন যে আমরা ২০২২-এ কবুল করার পর ২০২৫ পর্যন্ত কেন বাসায় অপেক্ষা করলাম? এর কারণ হচ্ছে আমার বোন যেহেতু তখনও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠেনি এ জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। পরবর্তীতে সে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় তখন আমরা ১৬ সেপ্টেম্বর বাসা থেকে বের হই। বাসা থেকে নিজ জিম্মায় বের হওয়ার পর আমরা আমাদের অ্যাফিডেভিটের কাগজটা করে ফেলি (তারা দুজনই অ্যাফিডেভিটের কাগজ প্রদর্শন করেন)।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবার ফোন বন্ধ ছিল। আমার ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে ব্যাপারটা জানিয়ে দিই।’

নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে স্নিগ্ধা বলেন, ‘আমরা বর্তমানে যেখানে আছি আলহামদুলিল্লাহ, আমরা নিরাপত্তার সঙ্গে এবং নিজ জিম্মায় স্বাভাবিকভাবে অবস্থান করছি। নিরাপত্তার জন্য আমাদের মোবাইল নম্বরটি কিছু দিনের জন্য বন্ধ রেখেছি।’

তাদের ইসলাম গ্রহণের কারণে প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের হয়রানি করা হচ্ছে দাবি করে স্নিগ্ধা বলেন, ‘আমরা বিশ্বস্ত মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমাদের ইসলাম কবুলের জন্য আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের বন্ধুবান্ধব, সহপাঠীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

হয়রানি বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে স্নাতক শিক্ষার্থী স্নিগ্ধা বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যভাবে ইসলাম ধর্ম কবুল করেছি। আমাদের কেউ চাপাচাপি জোরাজুরি কিছুই করেনি। আমরা নিজ ইচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং সুস্থ মস্তিষ্কে ইসলাম ধর্ম কবুল করেছি। তারপরও আমাদের প্রতিবেশীকে কেন হয়রানি করা হচ্ছে আমরা আসলে ব্যাপারটা জানি না। প্রশাসন এবং আমাদের পরিবারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা এ রকম হয়রানিমূলক কাজ একদম করবেন না। প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ আমরা এই হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই। আপনারা অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ।’

বার্তার শেষ দিকে পরিবারের উদ্দেশে স্নিগ্ধা বলেন, ‘আমরা যেখানে আছি, আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি, স্বাভাবিক আছি। আমাদের নিয়ে আপনারা একদমই পেরেশান হবেন না। আমরা ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করবো। আরও অনুরোধ, আমাদের এই ইসলাম কবুলের জন্য আমাদের চারপাশের কোনও প্রতিবেশী বা যে কাউকে হোক কোনও প্রকার হয়রানিমূলক কাজ করবেন না।’

পুরো ভিডিও বার্তায় পাশে বসে থাকা ছোট বোন পূর্ণিমা রানি নিজের পরিচয় দেওয়া ছাড়া কোনও কথা বলেননি। পুরো সময় তার মুখ বেশ মলিন দেখাচ্ছিল। একটি ঘরের ভিতর ভিডিও বার্তাটি রেকর্ডের সময় ক্যামেরার পেছনে কে ছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ভিডিও বার্তাটির বেশ কিছু বাক্য তৃতীয় পক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী বলা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

স্নিগ্ধা ও পূর্ণিমার বাবা শৈলেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে কথাগুলো তাদের আগে ভালো করে শিখিয়ে পড়িয়ে বলানো হয়েছে। ছোট মেয়েটার মুখ বেশ মলিন ছিল। ওকে দেখে মনে হয়েছে ওর কান্না পাচ্ছিল।’

‘বাড়ি থেকে চলে গিয়ে সেদিন আমার ছেলেকে ফোন দিয়ে শুধু বলেছিল যে ধর্ম বদলিয়েছে। এরপর কান্না করে কেটে দিছে। আর তাদের খোঁজ পাচ্ছি না। কে তাদের নিয়ে গিয়ে রাখছে, কোথায় রাখছে, কেমন রাখছে, কীভাবে রাখছে কিছু জানতে পারছি না। আমি কী করবো কিছু বুঝতে পারছি না’- বিচলিত হয়ে বলেন স্কুলশিক্ষক বাবা।

প্রতিবেশী কিংবা বন্ধুবান্ধবদের হয়রানি করা নিয়ে মেয়েদের দাবি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এটা ওদের দিয়ে বলানো হয়েছে, যাতে আমরা খোঁজ-খবর না করি।’ উৎস: বাংলাট্রিবিউন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়