শিরোনাম
◈ কাপাসিয়ার কামারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়: বিনা ছুটিতে আমেরিকা বসে বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ◈ চীনের বাঁধে ভারতের পানিঝুঁকি, বাড়ছে সংঘাতের আশঙ্কা ◈ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা প্রশমণে ভারতের লবিং ফার্ম নিয়োগ  ◈ বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্কের স্থায়িত্বে প্রয়োজন ক্ষমা প্রার্থনা: বিশেষজ্ঞদের মত ◈ ডেঙ্গুতে আরো ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪১২ ◈ ‌‌‌'আন্দোলনের সময় ছাত্রদের ন..গ্ন ভিডিও করে রেখে দিতেন তৌহিদ আফ্রিদি' (ভিডিও) ◈ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার পশ্চিমা বিশ্বের ১১ দেশের ◈ কারাগারে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের হার্ট অ্যাটাক ◈ বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান প্রাণনাশের শঙ্কায়, চাইলেন নিরাপত্তা ◈ সারাদেশে একযোগে ৫৩ বিচারককে বদলি

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:৫৫ বিকাল
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খাদ্য চাহিদা পূরণ, শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাসাবা (Cassava)

লিয়াকত হোসেন জনী, মধুপুর, টাঙ্গাইল: বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে শুধু ধান, গম বা আলুর ওপর নির্ভরশীল থাকা ভবিষ্যতের জন্য টেকসই সমাধান নয়। এ প্রেক্ষাপটে বিকল্প খাদ্যশস্য হিসেবে কাসাবা (Cassava) একটি সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।

কাসাবা মূলত এক ধরনের কন্দজাতীয় ফসল, যা বিশ্বের বহু দেশে প্রধান কার্বোহাইড্রেট উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি চাল বা আলুর বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি খরা ও অনুর্বর জমিতেও সহজে উৎপাদন করা যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর হতে পারে।

কাসাবার পরিচয় ও প্রকারভেদ

কাসাবার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যানিহট এসকিউলেনটা (Manihot esculenta)। এটি শিমুল আলু নামেও পরিচিত। অনেক জায়গায় একে ব্রাজিলিয়ান অ্যারারুট, মানিয়ক বা ট্যাপিওকা বলা হয়।
কাসাবা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:

মিষ্টি কাসাবা (Sweet Cassava): এতে হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN) কম থাকে। রান্না বা সিদ্ধ করলে এটি নিরাপদ খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং সাধারণত মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তেতো কাসাবা (Bitter Cassava): এতে উচ্চমাত্রার সায়ানোজেনিক যৌগ থাকে। সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করলে এটি বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। সাধারণত এটি শিল্প বা পশুখাদ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে কাসাবার সম্ভাবনা

বর্তমানে দেশে কাসাবার চাষ সীমিত হলেও গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় এর চাষ সফলভাবে করা সম্ভব। এটি শুধু খাদ্যশস্য নয়, বরং শিল্পক্ষেত্রে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। কাসাবা থেকে উৎপাদিত স্টার্চ ব্যবহার করা যায়—

  • টেক্সটাইল শিল্পে
  • কাগজ উৎপাদনে
  • বেকারি ও খাদ্য শিল্পে
  • ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে

এভাবে কাসাবা দেশের শিল্প ও অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জলবায়ু অভিযোজন

  • প্রচলিত খাদ্যশস্য যেমন ধান, গম ও আলুর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা খাদ্য ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে।
  • কাসাবা খরা ও লবণাক্ত জমিতে সহজে উৎপাদনযোগ্য হওয়ায় এটি জলবায়ু অভিযোজনের একটি কার্যকর সমাধান।
  • কৃষিনীতিতে কাসাবাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে কৃষকের আয় বাড়বে, খাদ্য বৈচিত্র্য নিশ্চিত হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক অবদান রাখবে।

রপ্তানিতে সম্ভাবনা

বিশ্ববাজারে কাসাবা থেকে তৈরি স্টার্চ, স্ন্যাকস, পশুখাদ্য ও অন্যান্য শিল্পজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের কাসাবা পণ্য রপ্তানি হয়। বাংলাদেশও চাইলে প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলে রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করতে পারে। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

সম্ভাব্য ঝুঁকি

  • সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করলে কাসাবায় থাকা সায়ানোজেনিক যৌগ মানবদেহে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
  • সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় তেতো কাসাবা ভুল করে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • একমাত্র খাদ্য হিসেবে কাসাবা উপযুক্ত নয়, কারণ এতে প্রোটিন ও খনিজ উপাদানের ঘাটতি রয়েছে।
  • বাজার চাহিদার কারণে অতিরিক্ত কাসাবা চাষ করলে দীর্ঘমেয়াদে একক ফসল নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

করণীয়

  • কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
  • মিষ্টি ও কম বিষাক্ত জাত উদ্ভাবনে গবেষণা বাড়ানো।
  • খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের আগে মান নিয়ন্ত্রণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিশ্চিত করা।
  • জাতীয় খাদ্য নীতিতে কাসাবার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন।

কাসাবা একটি সম্ভাবনাময় ফসল, তবে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন পরিকল্পনা, গবেষণা ও সচেতনতা। অন্ধভাবে চাষাবাদ না করে যদি নীতিগত ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নেওয়া যায়, তবে কাসাবা বাংলাদেশের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়