এম আর আমিন, চট্টগ্রাম ; চট্টগ্রাম নগরের দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে চাক্তাই-কালুরঘাট বেরিবাঁধ ও সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বর্ষাকালে নালা-খাল উপচে পড়া পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহিত হবে, ফলে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমে যাবে। একই সঙ্গে নদীর তীর রক্ষা ও আধুনিক সড়ক—দুটি সুবিধাই মিলবে নগরবাসীকে।
স্থানীয়দের মতে, এ বাঁধ-সড়ক কেবল জলাবদ্ধতা নিরসনেই নয়, বরং বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষা এবং বাণিজ্যিক গতিশীলতাও নিশ্চিত করবে।
কাজের অগ্রগতি
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পের ৮২% কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে শাহ আমানত সেতু ও কালুরঘাট সেতু অংশের মোট ১ কিলোমিটার সড়কে কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। দীর্ঘদিন অর্থ জটিলতার কারণে কাজ বিলম্বিত হলেও বর্তমানে সেই সমস্যা নেই। প্রকল্প পুরোপুরি শেষ হলে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই যেতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট।
সড়ক নির্মাণের মান
প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ জানান—
“রাস্তার প্রতিটি স্তরে (৮ ইঞ্চি করে) বালুর লেয়ার কমপ্যাকশন করে স্থাপন করা হচ্ছে, যা টেকসই সড়ক নির্মাণে অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি ধাপে ত্রুটি শনাক্ত করে তা সংশোধন করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে কোনো অংশ দেবে না।”
সড়কটি কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪ ফুট উঁচু ও ৮০ ফুট প্রশস্ত চার লেনের হবে। ৭ কিলোমিটারের কার্পেটিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে স্লুইস গেট
চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে ১২টি স্লুইস গেট, যা বর্ষায় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশে বাধা দেবে।
পর্যটন সম্ভাবনা
বাঁধ-সড়কের মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমান প্রকৃতিপ্রেমীরা। বিশেষ করে ছুটির দিনে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। সড়কের পাশের সারিসারি গাছ, নদীর অপরূপ দৃশ্য এবং সাজানো আরসিসি ব্লক পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।
প্রকল্পের ইতিহাস ও ব্যয়
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেক সভায় প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা এবং সময়সীমা ছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সময়সীমা কয়েক দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২৬ সালের জুন নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে এবার ব্যয় আর বাড়ানো হয়নি।