শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা: দেবিদ্বার পৌরসভার নাগরিকদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে বাস্তবায়িত ২৮ কোটির ‘ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প’ পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আগেই দেখা দিয়েছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসা থেকে রাতের অন্ধকারে চুরি হয়ে যাচ্ছে পানি মিটার। ফলে পানি সরবরাহ কার্যক্রম শুরুর আগেই অনিশ্চয়তায় পড়েছেন গ্রাহকরা।
দেবিদ্বার পৌর এলাকার শান্তিরোড, ছোট আলমপুর, মহিলা কলেজ রোড, গোমতী ও মোহনা আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা যায় বাসার বাইরে লাগানো অধিকাংশ পানির মিটারই চুরি হয়ে গেছে। চুরি ঠেকাতে বাকীরা মিটার খুলে নিয়ে ঘরে রেখে দিয়েছেন, কেউ আবার লোহার খাঁচা বানিয়ে এনে মিটারের উপর নিরাপত্তা বেস্টনী দিয়েছেন। এতে কর বাড়তি খরচও গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
ছোট আলমপুরের বাসিন্দা ও গ্রাহক জাকির হোসেন বলেন, ‘ ঈদুল আযহার পর আমার বাড়ির মিটারসহ বেশ কিছু মিটার চুরি হয়ে যায়। চোরের ভয়ে বাকীরা মিটার খুলে ঘরে তুলে রেখেছে। আবুল কাশেম নামে অপর এক বাসীন্দা বলেন, চোরের হাত থেকে মিটার বঁাঁচাতে মিস্ত্রি দিয়ে লোহার খাঁচা বানিয়ে লাগিয়েছি। এতে আমার প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু আর কোনো উপায় ছিল না।’ তাঁর মতো আরও অনেকেই বাড়তি খরচে মিটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, এখনো পানি আসেনি, অথচ মিটার চোর এসে গেছে।
কলেজ রোডের বাসিন্দা মো, আবুল হাসেম বলেন, কর্তৃপক্ষকে মিটার চুরির বিষয়টা জানানো হয়েছে। সহসাই মিটার পাবার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন তারা। শুরুতেই এই ভোগান্তি মেনে নেওয়া কষ্টকর। পৌর এলাকার আরেক গ্রাহক মো. শাহজাহান মাস্টার বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস আগে সংযোগ পেলেও এখনও পানি পাইনি। এখন আবার মিটার চুরি হয়ে গেছে। নতুন মিটার লাগাতে হলে আবার খরচ।’
দেবিদ্বার পৌরসভা সূত্রে জানাযায়, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেবিদ্বার পৌরসভার আওতায় থাকা প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জন্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। দুটি ধাপে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জিলানী ট্রেডার্স’। প্রথম ধাপে ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
এর মধ্যে ১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪২ টাকা ব্যয়ে দেবিদ্বার পৌরসভা কাজটি বাস্তবায়ন করছে। প্রথম দিকে পানি সরবরাহের জন্য চার হাজার ৫০০ পরিবারের জন্য লক্ষমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। জনবল নিয়োগসহ আনুসঙ্গিক কিছু কাজ সম্পন্ন হলে আগামী ২ মাসের মধ্যে পানি সরবরাহ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে পৌরসভা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী অর্জিন চাকমা বলেন, ‘পানি সরবরাহ প্রকল্পটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তরের আগেই বহু জায়গায় মিটার চুরি হয়ে যাচ্ছে শুনছি। এতে পানি সরবরাহে বিঘœ ঘটতে পারে।’
পৌর নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মোহাম্মদ আবুজর গিফরী বলেন, গ্রাহকের মিটার চুরির বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। ধারনা করা হচ্ছে এক হাজারের বেশি মিটার চুরি হয়েছে। এবিষয়ে প্রতিটি গ্রাহককেই আমরা সতর্ক করেছি কারণ মিটার গুলো গ্রাহকদের। চুরি হলে আবার তাদের টাকা দিয়ে নতুন মিটার লাগাতে হবে।
দেবিদ্বার পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। চুরির বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে এবং অপরিচিত কাউকে এলাকায় সন্দেহজনকভাবে দেখলে দ্রুত প্রশাসনকে জানাতে হবে।’