আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় চাঁদাবাজির অভিযোগে রুহুল আমিন নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে গণপিটুনি দিয়েছেন স্থানীয় জনতা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, শাজাহানপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গণপিটুনিতে আহত রুহুল আমিন বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। রুহুল আমিন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার কয়রা শরতলীর বাসিন্দা এবং সম্প্রতি বগুড়া সারিয়াকান্দী থানার চন্দনবাইসা পুলিশ ফাঁড়িতে বদলি হয়ে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি শাজাহানপুর থানায় কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই ঘটনায় নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন শাজাহানপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে রুহুল আমিন নিজেকে ডিবি পরিচয়ে অ্যাডভোকেট শাপলার বাবা মো. আব্দুল বাকি শাহের (৬০) বাড়িতে যান তাকে আটকের উদ্দেশ্যে। বাবাকে না পেয়ে তিনি ৫০০ টাকা নিয়ে যান।
আজ সকালে রুহুল আমিন আবারও তাদের শাজাহানপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর শাহ্ পাড়া গ্রামে আসেন এবং শাপলার ছোট ভাই মো. সাজ্জাদ হোসেন সবুজের (৩২) খোঁজ করেন। সবুজ আসার পর রুহুল আমিন তাকে জানান যে, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছে তাদের বাড়ির কোণায় 'কিছু' আছে এবং সবুজ যেন তার সাথে গিয়ে সেটা উদ্ধার করে।
রুহুলের কথামতো সবুজ তার বাড়ির দক্ষিণ পাশের কলা বাগানের কোণায় যায় এবং সেখানে একটি ছোট টিনের কৌটা পায়। রুহুল আমিন সবুজকে কৌটাটি তুলতে বললে সবুজ কৌটা খুলে ভেতরে ২০ রাউন্ড বুলেট (কার্তুজ) পান।
এই বুলেটগুলোকে '২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থানা থেকে মিসিং বুলেট' আখ্যা দিয়ে সবুজকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন রুহুল আমিন এবং এর বিনিময়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। একইসাথে সবুজকে ভয় দেখিয়ে রুহুল জানান যে, তার সাথে আরও ৮-৯ জন সিভিল পোশাকের পুলিশ সদস্য আছেন এবং টাকা দিলে তাদের ম্যানেজ করা যাবে।
ঘটনাটি সবুজ তার বোন শাপলাকে জানালে তিনি এবং তার স্বামী মোঃ শাহাদত আলম (৪৩) দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু তারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রুহুল আমিন অভিযোগকারীর মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেন।
একপর্যায়ে ঘটনাটি স্থানীয়দের নজরে এলে তারা রুহুল আমিনকে আটক করে মারধর শুরু করেন। অভিযোগকারী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানালে তারা এসে রুহুল আমিনকে নিজ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে বর্তমান শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগে রুহুল আমিন নামে একজন কনস্টেবলকে স্থানীয়রা আটক করেছিল। তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে রুহুল আমিনকে পুলিশ হেফাজতে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজির বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।