এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: মাত্র দেড় মাস আগে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ পিরোজপুর থেকে নওয়াপাড়া বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশ থেকে সহস্রাধিক কাঁচা-পাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল। অভিযানের পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল—সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে, যানজট কমবে। কিন্তু মাত্র ৪৫ দিনের ব্যবধানে সেই স্বস্তি মিলিয়ে গেছে। উচ্ছেদকৃত স্থানগুলোতে আবারও গজিয়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা, সৃষ্টি হয়েছে আগের মতোই বিশৃঙ্খলা।
রাতের আঁধারে স্থাপনা গড়ে তোলা, দিনের আলোয় কাঠামো দাঁড়িয়ে যায়
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় পুনরায় স্থাপনা গড়ে ওঠার প্রবণতা বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “ভেবেছিলাম এবার সড়ক প্রশস্ত থাকবে, যানজট কমবে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই আবার দোকান উঠতে শুরু করেছে। রাতের অন্ধকারে নির্মাণ চলে, সকাল হলে দেখা যায় দোকান তৈরি।”
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “সওজ একবার অভিযান চালিয়ে চলে যায়, এরপর আর কোনো ফলোআপ থাকে না। স্থানীয় অসাধু চক্র ও নেতাদের মদদে এসব দোকানপাট ফের বসানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলেই উল্টো বিপদে পড়ে।”
দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে, সংকুচিত হচ্ছে রাস্তা
স্থানীয় বাসিন্দা ইমন বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম এবার গাড়ি চলাচলে সুবিধা হবে, কিন্তু পরিস্থিতি আগের মতোই হয়ে গেছে।”
শাহীন হাওলাদার বলেন, “একটি সড়ক দুর্ঘটনা শুধু একজন মানুষের জীবনই নয়, পুরো একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দিতে পারে। সড়কের দুই পাশে যেভাবে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে, তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। পার্কিংয়ের জায়গা নেই, গাড়ি চলাচলে সমস্যা, আর এসবের মূলে রয়েছে অব্যবস্থাপনা ও অবৈধ দখল।”
সওজের অবস্থান ও করণীয়
সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, “নওয়াপাড়া থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে যেসব অবৈধ স্থাপনা ছিল, আমরা সেগুলো উচ্ছেদ করেছি। কেউ পুনরায় স্থাপনা গড়ে তুললে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে—আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সাব-ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্টরা নিয়মিত তদারকি করছেন। তবে শুধু সওজ নয়, এই সমস্যার সমাধানে প্রশাসন, পুলিশ এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। একাধিকবার উচ্ছেদ করা হলে হয়তো দখলদাররা নিরুৎসাহিত হবে। সবচেয়ে জরুরি হলো সামাজিক সচেতনতা ও ধারাবাহিক নজরদারি।”