ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে এক যুবলীগ নেতার হাতে স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পরে সমালোচনার মুখে সেটি ফেরত আনে উপজেলা প্রশাসন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মঙ্গলবার এই কার্ড বিতরণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন গফরগাঁও থানার সদ্য সাবেক ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে যুবলীগ কর্মী মো. তারা মিয়া ছাড়াও স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয় নুরে আলম সালেক, মো. রিমন মিয়া, ওয়াজেদ আলী শেখ, অপূর্ব হিমেল রানা ও মোসাম্মত রুমীকে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তারা মিয়া সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল ও সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল হোসেন সুমনের ঘনিষ্ঠজন। তারা মিয়া মশাখালী ইউনিয়নের টানপাড়া গ্রামের হক মিয়ার ছেলে। তার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণের ছবি ও ভিডিও রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপির আনন্দ মিছিলের সময় রাকিয়াপুড়া এলাকায় তার ভাইয়ের অসাবধানতাবশত চোখে লাঠির আঘাতে তারা মিয়া আহত হন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান আশিক বলেন, “আহতদের তালিকা তৈরির জন্য একটি যাচাই-বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা তদন্ত করে তালিকা তৈরি করে। প্রশাসন কীভাবে একজন দলীয় নেতাকে এই তালিকায় যুক্ত করল, তা এখন বড় প্রশ্ন। এটা প্রশাসনের চরম গাফিলতি।”
এ বিষয়ে গফরগাঁও থানার সদ্য সাবেক ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু গিয়ে দেখি, সেটা আসলে জুলাই যোদ্ধাদের অনুষ্ঠান। আমি জানতাম না যে, যুবলীগের নেতা তারা মিয়া ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে কার্ড নিচ্ছেন।”
ঘটনার বিষয়ে জানতে একাধিকবার গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুনের মোবাইলে ফোন করলে তিনি তা ধরেননি।
তবে বুধবার রাত ১১টার দিকে গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসনের ফেইসবুক পেইজে বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট দেন ইউএনও। তাতে বলা হয়, একটি ছবি ভিন্নভাবে ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে কেউ যদি ইচ্ছা করে নিজেকে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে নাম দিয়ে থাকে তাহলে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।
আর তারা মিয়াকে স্বাস্থ্য কার্ড ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই পোস্টে বলা হয়।
পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে একই ফেইসবুক পেইজে আরেকটি পোস্টে জানানো হয়, এরই মধ্যে তারা মিয়ার কাছ থেকে স্বাস্থ্য কার্ডটি ফেরত নেওয়া হয়েছে। এ সময় কাগজ-পত্র যাচাই করার জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা মিয়া বলেন, “একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ২০০১ সালে মশাখালী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি প্রকৃত পক্ষেই জুলাই যোদ্ধা। সব ধরনের তথ্য আমার কাছে রয়েছে।”
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মেয়রের সঙ্গে ছবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কে বা কারা ষড়যন্ত্র করে তুলেছে তা আমার জানা নেই।” বিডিনিউজ