কেজিডিসিএল ও সিডিএ যেন দুর্নীতির আঁতুর ঘর
এম আর আমিন, চট্টগ্রাম : অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে চট্টগ্রাম র্কণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড কেজিডিসিএল ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(সিডিএ) এই দুইটি প্রতিষ্ঠান। বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে চট্টগ্রামে র্কণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
নির্বিঘ্নে এসব হরিলুটের আয়োজন সম্পন্ন করতে ভেঙ্গেছেন প্রতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা। তাই এসব কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি বিশ্লেষকদের।
চট্টগ্রামে র্কণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) খতিয়ানভুক্ত জমিতে মো. দুলা মিয়া নামের একজনের নামে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় সরকারী পাহাড়েও মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, নগরের চান্দগাঁও থানার সিটি গার্ডেন আবাসিক এলাকার, চান্দগাঁও মৌজার বিএস ৩ নং খতিয়ানে ৮ নং দাগের মালিক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সিডিএ। ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসে ওই দাগের ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে ৮ টি দ্বিমুখী চুলার গ্যাস সংযোগ পেয়েছেন বোয়ালখালী উপজেলার চর খিজিরপুর গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র মো. দুলা মিঞা নামের এক ব্যক্তি। যার কোড নং- ১ডি-৫১-৪০০১। তৎকালীন সময়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন শেখ হাসিনা। ফলে সেই সময়ে বিষয়গুলো নিয়ে তেমন কেউ ঘাটেনি। ঠিকাদার হিসেবে কাজটি করেছিল মোমিন রোডের মেসার্স শফী এন্টারপ্রাইজ। কর্ণফুলী গ্যাসের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন তৎকালীন বিক্রয় উত্তর ডিপার্টমেন্টের জোন ২ এর ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ রইস উদ্দীন আহমেদ। স্বাক্ষী ছিলেন একই জোনের উপ ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল আলীম ও উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দীন।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ২০১৪ সালে জমিটি নামজারি করার জন্য ১০৭/১৪ নং মিস মামলায় আবেদন করেন দুলা মিঞা। আবেদনের শুনানিতে বলা হয়েছে ২৮.৮.২০১৪ এর সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৮ নং দাগ দখলে থাকলেও ১৫/১১/২০০০ ইং তারিখের ১৭৩৬১ নং দলিলে বিএস ৮ নং দাগ না থাকায় মামলাটি খারিজ করা হলো। অর্থাৎ দুলা মিঞা ওই জায়গার প্রকৃত মালিক নয়, জমিটি সিডিএ’র মালিকানাধিন অথচ ওই জায়গাতেই ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে গ্যাসের সংযোগ দিয়েছে র্কণফুলী। যেখানো মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন হতে পারে বলে মনে করছেন একই সংস্থার একাধিক ব্যক্তি। তবে অফিসিয়াল ডেকোরাম ঠিক রাখতে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি নয়।
এব্যপারে জানতে চাইলে ওই চুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষরকারী কেজিডিসিএল এর তৎকালীন উপ সহকারী প্রকৌশলী (জোন-২) বর্তমানে সহকারী প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দীন বলেন, আমরা যখন অনুমোদন দিয়েছি তখন ফাইলে সব কাগজপত্র ছিল। তবে সেগুলো জালিয়াতি করে দাখিল করা হয়েছিল কিনা তা আমাদের জানা নেই। কারন আমরা শুধুমাত্র কাগজ আছে কিনা তা দেখি নকল বা ভুয়া কাগজ কিংবা জাল জালিয়াতি করা হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়।
এ বিষয়ে জানতে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিনের মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সুত্র জানায়, ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের অন্যান্য জমির সাথে ওই জমিটি অধিগ্রহণ করে সিডিএ। পরে সেখানে কোন প্রকল্প গ্রহণ না করায় যে যার মতো দখলে নিয়ে ভোগ দখল করে। অনেকে কয়েকতলা ভবন ও দোকান নির্মাণ করে একচেটিয়া ভাড়া বাণিজ্য করে যাচ্ছে একটি চক্র। স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায় সিডিএ এর প্রায় ৪ বিঘা জায়গা এখানে বেওয়ারিশের মতো পড়ে আছে, অনেকেই প্রভাব খাটিয়ে এসব জায়গার ওপর ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সিডিএ’র কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা মাঝে মাঝে এসে মাসোয়ারা নিয়ে যায়, ফলে এসবের দিকে তাকায় না দায়িত্বশীলরা। সিডিএ এর এস্টেট শাখা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হওয়ায় এসব জমির খবর রাখেনি কেউ। সরেজমিনে গিয়েও এসব দখলবাজির সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, সিডিএ এর সিনিয়র এস্টেট অফিসার চৌধুরী মো. আবু হেনা বলেন, এসব অবৈধ দখলদারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে জানিয়েছি, যতটুকু জানি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যান সাহেব চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে মার্ক করেছে, এখন কি অবস্থায় আছে তা বলতে পারব না।
সিডিএ এর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন সামস বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার কাছে এমন কোন ফাইল আসেনি।