হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরে জুট মিলের নারী শ্রমিককে (২২) সুন্দরবনে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাঁচার করে যৌনপল্লীতে বিক্রির ঘটনায় দুই নারী সহকর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) শামীমা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ২০১২ সালের ২৯ মে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মানব পাচার আইনে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী ওই নারী শ্রমিকের মা।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছে-সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বৈশাখালী গ্রামের আমীর আলী মোল্যার মেয়ে মাকসুদা বিবি (৩৫) ও আটিরোপর এলাকার মতিয়ার পালের মেয়ে মর্জিনা ওরফে সোনালী (২৫)। রায় ঘোষণার সময় আসামীরা পলাতক ছিলেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পারোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী ও তাঁর দুই মেয়ে ফরিদপুরের কানাইপুর করিম জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। একই মিলে আসামী মাকসুদা বিবিও কাজ করতেন। কাজের সুবাদে তাঁদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন মাকসুদা বিবি।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, সুম্পর্কের সুবাদে আসামী মাকসুদা তাঁর গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠানের কথা বলে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং সুন্দরবন ঘুরে দেখাবে বলে জানান। এক পর্যায়ে ২০১২ সালের ৮ মে তার বড় মেয়ে (২২) মাকসুদার সাথে চলে যান। পরবর্তীতে তাকে সুন্দরবন দেখানোর কথা বলে ভারতে পাঁচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেয়া হয়। এরপর একটি ভারতীয় নাম্বারে ফোন আসে এবং জানানো হয়- তাঁর মেয়েকে পাঁচার করে কলকাতায় একটি পতিতা পল্লীতে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পরে একই বছরের ১৮ মে কলকাতা পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে জিম্মায় রাখেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের মাধ্যমে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করেন সংগঠনটির সদস্য এবং ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী শামসুন্নাহার নাইম।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া রতন জানান, দীর্ঘ ১৩ বছর আগে মামলাটি দায়ের করা হয়। শুনানি ও সাক্ষ্য শেষে আজ মামলাটির রায় প্রদান করেন বিচারক।
তিনি আরও জানান, মামলায় দুই নারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক। পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেন আদালত। তবে রায় ঘোষণার সময় সাজাপ্রাপ্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তারা পলাতক রয়েছেন, তাদের গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।