আল হেলাল, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : বিবাহিত স্ত্রী ও ৩ বছরের নাবালক প্রতিবন্দী শিশুকে উপেক্ষা করে যৌতুক নিরোধ আইনের মামলার পলাতক আসামী হওয়ার পরও বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে এক সন্ত্রাসী লম্পট মাওলানাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত উক্ত মাওলানার নাম মাফিকুল ইসলাম মাহফুজ (৩৬)। তিনি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের গজারিয়া সলমন্তপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র।
সুনামগঞ্জ ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকারের দলীয় লোক পরিচয়ে দাপট প্রভাব খাটিয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়ন এলাকায় ৩ বিদেশী ভাইয়ের একমাত্র গ্রাজুয়েট পাশ করা বোনকে ৩ বছর আগে বিয়ে করেন উক্ত মাওলানা।
বিয়ের কিছুদিন পর শ্বশুরবাড়ীর বিদেশী আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে পিতামাতাকে কিছু টাকা দিয়ে নিজের বোনদের বিবাহ এবং বাকী টাকা দ্বারা ২ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে পাড়ী জমালেও গত ৪ মাস আগে দেশে ফিরে নিজের স্ত্রী সন্তানের মুখ দেখেননি তিনি। এমনকি লম্পট শ্বশুড় ও ভগ্নিপতি তার স্ত্রী সন্তানকে নির্যাতন করে গ্রামের বাড়ী থেকে বিতাড়িত করেছে জেনে শ্বশুড়বাড়ী গিয়ে ঘুণাক্ষরেও একমাত্র প্রতিব›দ্বী
শিশু ও স্ত্রীর কোন খবর নেননি। বরং তাদেরকে উপেক্ষা করে ২য় বার বিয়ের পিড়ীতে বসে আরেকটি মেয়ের সাথে নতুন করে ঘর সংসার সাজানোর
এক পর্যায়ে ১৮ জুন বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সহজে বিদেশে পাড়ি জমানোর সকল
প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন ঐ মাওলানা।
অন্যদিকে অসহায় স্ত্রী সিলেটের চীফ জুডিসিয়েল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীনস্থ গোলাপগঞ্জ কোর্টে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় উক্ত প্রতারকের বিরুদ্ধে সিআর ১৯২/২০২৫ নং মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালত আসামী মাফিকুল ইসলাম মাহফুজ এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। ১৬ জুন সোমবার জামালগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের কাছে গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট এর কপি পৌছে। ওসি সাইফুল ইসলাম তাৎক্ষনিকভাবে দূর্ঘম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতারক আসামী পুলিশের আগমন টের পেয়ে রহস্যজনকভাবে ঘা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপন করে।
আত্মগোপনের একপর্যায়ে ১৬ জুন সোমবার রাতে মোহনগঞ্জ হয়ে ট্রেনযোগে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধর্মপাশা থানা ওসি মোঃ এনামুল হকের নির্দেশে পুলিশ তাকে আটক করে মঙ্গলবার দুপুরে জামালগঞ্জ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। এদিকে বিকেলে জামালগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামীকে সুনামগঞ্জ কোর্টে সোপর্দ করে। একজন অসহায় নারী ও তার নাবালক প্রতিবন্দী শিশুর ন্যায়বিচার নিশ্চিতে জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা পুলিশ প্রশাসনের এই
মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করেছেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আল হেলাল।
তিনি বলেন,জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা থানা পুলিশ একজন বিদেশগামী প্রতারক পলাতক আসামীর দেয়া মোটা অংকের ঘুষের টাকাকে তুচ্ছ মনে করে ঐ আসামীকে অত্যন্ত সুকৌশলে গ্রেফতারের পর আদালতের হাতে সোপর্দ করে অসম্ভবভাবে মানবিকতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। পুলিশের এ তৎপরতায় কোলের শিশুসহ একজন অবলা নারী ন্যায়বিচার লাভে সক্ষম হয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদিনী ঐ অবলা নারী।