ঠাকুরগাঁওয়ে বাবার চোখের সামনেই নদীতে ডুবে প্রাণ গেল ভাই বোনের
জাকির হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঈদের ছুটিতে বাবার সঙ্গে নানার বাড়ি বেড়াতে এসে নদীতে ডুবে প্রাণ গেল দুই ভাই-বোনের। নাগর নদে বাবার চোখের সামনেই পানিতে ডুবে গেল ১১ বছরের বোন ও ৬ বছরের ভাই। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় বোনের নিথর দেহ উদ্ধার করা গেলেও ভাইয়ের কোনো সন্ধান মেলেনি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরের দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের মানিকহাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মেয়ে শিশুর নাম সাবিনা আক্তার (১১) এবং নিখোঁজ রয়েছে তার ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেন (৬)। তাদের বাবা আমিরুল ইসলাম রংপুর থেকে পরিবার নিয়ে মানিকহাড়ি গ্রামে শ্বশুর শামসুল হকের বাড়িতে ঈদ করতে এসেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনরা জানায়, আমিরুল ইসলাম পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তীব্র গরম থেকে স্বস্তি পেতে দুই সন্তান সাবিনা ও সাদ্দামকে নিয়ে বাড়ির পাশে নাগর নদে গোসল করতে যান তিনি। বাবা ও সন্তানরা মিলে পানিতে নেমে আনন্দ করছিলেন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ নদীর গভীর অংশে চলে যায় দুই শিশু। চোখের পলকে স্রোতের টানে তলিয়ে যায় তারা।
সন্তানদের ডুবে যেতে দেখে বাবা আমিরুল ইসলাম তাদের বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে নদী থেকে উদ্ধার করলেও শিশু দুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খবর পেয়ে গ্রামবাসী নদীতে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে সাবিনার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ছোট ভাই সাদ্দামের কোনো খোঁজ মেলেনি।
আদরের মেয়ের মরদেহ বুকে জড়িয়ে বাবার আর্তনাদে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। পুরো গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। ৩ নম্বর বকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রংপুর থেকে বেড়াতে এসে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি। বাবার সামনেই দুই সন্তান পানিতে ডুবে গেল। আমরা মেয়েটির লাশ পেয়েছি, কিন্তু ছেলেটি এখনো নিখোঁজ।’
হরিপুর থানার ওসি জাকারিয়া মন্ডল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।