শিরোনাম
◈ আ. লীগের নিবন্ধন বাতিল ইস্যুতে বৈঠক শেষে যা বলছে ইসি (ভিডিও) ◈ প্রবাসী আয়ে সর্বকালের রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ! ◈ জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকাণ্ডের দায় শেখ হাসিনার: চিফ প্রসিকিউটর ◈ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা : প্রধান উপদেষ্টা ◈ চোখ বেঁধে গুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা ◈ টেস্ট থেকে অবসরে কোহলি ◈ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ ৫ অভিযোগ ◈ নেতাকর্মীদের জন্য জামায়াত আমিরের জরুরি বার্তা ◈ ঋণের চাপে ছোট হচ্ছে বাজেট, ৪ বছরে উন্নয়নে বরাদ্দ সর্বনিম্ন ◈ গাজীপুরে হত্যা মামলার আসামিদের তালাবদ্ধ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুড়ে ছাই তিন বসতঘর

প্রকাশিত : ১১ মে, ২০২৫, ০৭:০৯ বিকাল
আপডেট : ১২ মে, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঠিক কী ঘটেছিল দাম্পত্য জীবনে, আরও অজানা তথ্য দিলেন আত্মহত্যা করা এএসপি পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা 

অবশেষে মুখ খুলেছেন আলোচিত আত্মহত্যা করা এএসপি পলাশ সাহার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। এএসপি পলাশ আত্মহত্যা করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুস্মিতাকে নিয়ে চলছিল আলোচনা আর সমালোচনা। শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরী পাড়ার বাবার বাড়িতে বসে কথা বলেন সুস্মিতা সাহা।

সুস্মিতা বলেন, ওর (পলাশ সাহা) মা আমাকে সংসার করতে দেয়নি। আমার স্বামী আমার হাতের রান্না ভালো খেতো বলে আমার শাশুড়ি আমার রান্নাবান্না করা বন্ধ করে দিলো। আমার শাশুড়ির পরিকল্পনা ছিলো ছেলে বিয়ে করবে, তাড়াতাড়ি বাচ্চা হয়ে যাবে, বউ সংসার আর বাচ্চা নিয়ে থাকবে, আর সে তার ছেলেকে নিয়ে থাকবে।

আমাদের স্বামী-স্ত্রীকে এক সঙ্গে কথা বলতে দিতো না। দিনের মধ্যে যতটুকু বাসায় থাকার সুযোগ পেতো ততটা সময় আমার শাশুড়ির সঙ্গে থাকতো। কিন্তু আমি কিছু মনে করতাম না। সংসার কেবল মাত্র শুরু করেছি হয়তো একদিন না এতদিন ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই একদিন দিনে পর দিন হতেই থাকল, আমার স্বামীর মধ্যে কোনো পরিবর্তন হলো না। ও ওর মাকে সময় দিতো, আমাকে আর সময় দিতো না।

আমার স্বামীর ৩৫ বছর বয়স, যে দিন মারা গেলো সেদিন সকালেও আমার শাশুড়ি তাকে খাইয়ে দিয়েছে। আড়াই বছর ধরে দেখছি একটা বাচ্চা ছেলের মত ওর মা দেখাশোনা করছে। প্রতিটা ক্ষেত্রে ও কি পোশাক পড়বে, কি পোশাক কিনবে, ও কোনটা পড়ে অফিসে যাবে কি যাবে না, ও কখন কি খাবে, কখন ঘুমাবে, কখন ঘুম থেকে উঠবে সবটা ওর মা করে ও বলে দিতো। আমার স্বামীও সেটাই মেনে নিতো।

এই আড়াই বছরে পলাশের মা সকালের নাস্তা তৈরি করতো, আমাকে করতে দিতো না। আমার শাশুড়ি প্রথম ৬ থেকে ৭ মাস আমাকে অনেক যত্ন করেছে। আমি ভাবতাম আমি যদি ওর মাকে ভালোবাসি তাহলে ও ভালো থাকবে সেজন্য আমি প্রথম ৬ থেকে ৭ মাস অনেক করেছি।

আমার স্বামীর (পলাশ) পছন্দ ছিলো যারা সোনা, গহনা, অনেক যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে না সে রকম মেয়ে পছন্দ তার। কিন্তু আমার স্বামী নির্লোভী ছিলো, ও সৎ ছিলো, ও আমাকে প্রচণ্ড পছন্দ করতো। ও আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের পর ও অনেক মাতৃভক্ত ছিলো। ওর মাতৃভক্তি প্রচুর ছিল। আমিও সেটি মেনে নিয়েছিলাম, কারণ আমিও একদিন মা হবো। তাহলে আমার সন্তানটাও ওর মতো হবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে দেখলাম দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে। আমি ওদের খুব যত্ন করতাম, ওকে ওর মাকে, কিন্তু ওরা আমাকে বুঝতো না। আমার স্বামী আমাকে প্রচুর ভালোবাসতো। ওই যে একটা বয়সের পার্থক্য, আমাকে বুঝতো না। 

বিয়ের ৬-৭ মাস পর থেকে বলা শুরু করি, কোনো সমস্যা বা তোমার মানসিকতা এমন কেন, তুমি পছন্দ করে এনেছো, আমি তো হেঁটে আসিনি। তোমার কি ইচ্ছা করে না, বউকে নিয়ে একটু থাকি বা বউকে আলাদা করে একটু সময় দেই। কিন্তু ও বলতো বউকে আলাদা করে সময় দেয়ার কি আছে, মা আছে, আমি আছি, তুমি আছো যা করবো একসঙ্গে করবো। বউকে তো রাতে ভালোবাসা যাবে, রাতে তো বউয়ের সঙ্গে ঘুমাই, তখনই ভালোবাসবো। কিন্তু আমি বলতাম বউকে কি শুধু রাতে ভালোবাসার জন্য, ঘুমানোর জন্য বিয়ে করে, বউয়ের কোন শখ আহ্লাদ থাকে না।

আমার একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হলো এটা একটা টকসি, আমি তো ওর স্ত্রী, আমার নিজস্ব একটা সত্ত্বা আছে, আমি নিজের পরিচয় নিয়ে ভুগতে ছিলাম। আমি আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছিলাম না ওদের মাঝে। ওরা দুজনে কথা বলতো মা ছেলে। আমি যখন ওদের মাঝে যেতাম ওরা চুপ হয়ে যেতো, এটা কেমন ব্যবহার। আমি তো ওর স্ত্রী, ঘরের ভিতর আমরা মাত্র তিনটা মানুষ ছিলাম। 

আমার স্বামীকে আমিই প্রথম বলেছি মা যেহেতু গ্রাম থেকে এসেছে তাই মাকেই মাস্টার রুম, অ্যাটাস্ট বাথরুমটা মাকে দাও, পরিবেশটা মানাতে সহজ হবে। ওর মা ওর জন্য রান্না করতো ও যতটুক খেতে পারবে ততটুকু। এরপর থেকে আস্তে আস্তে আমার মনে মধ্যে পেইন হতে শুরু করলো এটা কেমন ব্যবহার। ওর চলে যেতো অফিসে তারপর আমি ও শাশুড়ি মার জন্য আবারো সকালের নাস্তা তৈরি করতাম আলাদাভাবে। ওর মা যদি তরকারী রান্না করতো শুধুমাত্র পলাশের জন্য রান্না করতো।

গত ৭ মে দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।

ওই চিরকুটে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার মৃত্যুর জনা মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।‬‎’

পরে গত ৮ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাবের পাহারায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশী গ্রামে। দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মাশানে তার মরদেহের শেষকৃত্য করা হয়। এর আগে র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। উৎস: চ্যানেল24

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়