মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী : নোয়াখালীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৭০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে গাছ থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে সড়ক প্রশস্তের কাজ। এতে বিধ্বস্ত সড়কে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন ঠিকাদাররা। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রæত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে এলজিইডি ও বনবিভাগ।
এলজিইডি নোয়াখালী কার্র্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় তিনটি প্রকল্পের অধীনে ৩.৬ কিলোমিটার দৈঘ্য সদর উপজেলার উদয় সাধুর হাট থেকে শান্তির হাট সার্জেন্ট জজহিরুল হক সড়ক, ৬.২৫ কিলোমিটার দৈঘ্য কবিরহাট উপজেলার কালামুন্সী বাজারর থেকে তেতুল তলা থানার হাট জিসি সড়ক, ৪.১৫ কিলোমিটার দৈঘ্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছোট ফেনী নদী সড়ক, ১০.১২ কিলোমিটার দৈঘ্য সুবর্ণচর উপজেলার কাঞ্চন বাজার- চেওয়াখালী-পরিস্কার বাজার-আটকপালিয়া জিসি সড়ক, ৬.০২ কিলোমিটার দৈঘ্য সদর ও কবিরহাট উপজেলার সোনাপুর আবদুল্যাহ মিয়ার হাট-কালামুন্সী- শাহাজির হাট সড়ক, ৬.০৮ কিলোমিটার দৈঘ্য সেননবাগ উপজেলা সেবারহহাট-করেন্স মুন্সী জিসি সড়ক, ১০ কিলোমিটার দৈঘ্য কোম্পানীগঞ্জ
উপজেলার চাপরাশির হাট-চর এলাহী- থানার হাট সড়ক প্রশস্তকরণের টেন্ডার শেষ করে ঠিকাদারদের কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং ১৯.০৩ কিলোমিটার দৈঘ্য বেগমগঞ্জ উপজেলার হাসান হাট-জমিদার হাট সড়ক ও ৬.০৫ কিলোমিটার দৈঘ্য সোনাইমুড়ি উপজেলার সোনাইমুড়ি- আমিশা পাড়া সড়ক টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
কিন্তু এই ৭০.৭৬ কিলোমিটার দৈঘ্য ৯টি সড়কের দুই পাশে বন বিভাগ ও বন বিভাগের স্থানীয় উপকারভোগীদের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ থাকায় ৭টি সড়ক প্রশস্তের কাজ করতে পারছেন না ঠিকাদাররা। অপর দুটি সড়কও টেন্ডারে বাঁধা সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে সড়কগুলো দেকা গেছে, ভাঙ্গাচুড়া সড়কের কাজের মেয়াদ দীর্ঘ হতে থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সড়কগুলোতে যান চলাচলসহ শিক্ষার্থী ও পপথচারীদের চলাচলে কস্ট হচ্ছে। কৃষি পন্য বাজারজাতকরণে ভোগান্তিতে পড়ছেন কৃষকরা। সড়কের ধুলাবালিতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, ফলে বাড়ছে রোগব্যাধি। অন্যদিকে সড়কের এসব পরিপক্ক গাছ না কাটায় পাশের কৃষি জমির ফসললও নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার সার্জেন্ট জজহিরুল হক সড়কের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানান, দীর্ঘ ৬-৭ মাস পূর্বে ঠিকাাাদার এই সড়কটির কাজ শুরু করেন। এসময় সড়কের পাশ প্রশস্ত করতে গিয়ে সড়কের ওপর বন বিভাগের গাছগুলো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ বন্ধ রাখেন ঠিকাদার।
এতে ভাঙা সড়কে যান চলাচলসহ জনগনের চরম ভোগান্তি শুরু হয়। স্থানীয়রা বলেন, এই সড়কটি এখন তাদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছ।
তাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব সড়কের পরিপক্ক গাছগুলো কেটে যেন সড়ক উন্নয়ন করা হয়। সড়ক উন্নয়ন শেষে পুনরায় নতুন করে পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর তাগিদ দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছোট ফেনী নদী সড়কের বাসিন্দা আলী হোসেন ও সেকান্তর মিয়া বলেন, আমাদের গাছ যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি সড়কেরও প্রয়োজন আছে। গত কয়েক মাস সড়কটির কাজ ফেলে
রেখেছে ঠিকাদার। এতে আমাদের কৃষি সবজি বাজারজাত ও ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। রাস্তার ধুলাবালিতে পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করার দাবি তোলেন সড়ক এলাকার বাসিন্দারা।
সোনাপুর আবদুল্যাহ মিয়ার হাট-কালামুন্সী-শাহাজির হাট সড়কে যাতায়াতকারী অটোরিক্সা চালক আমির হোসেন বলেন, এই সড়ক দিয়ে একবার যাতায়াত করলে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সড়কে বড় বড় গর্ত
থাকায় গত ৫ মাস কষ্ট করছি। এখনো সড়কের কাজ মুল কাজ শুরুই করা হয়নি।
চাপরাশির হাট বাজারের দক্ষিণ এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, বহু আগেই এই সড়কের গাছগুলো পরিপক্ক হয়ে গেছে। গাছে দাগ দিলেও বন বিভাগ গাছগুলো কাটছেচন না। এতে সড়কের পাশে আামাদের জমিনের ফসলগুলো নস্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে গাছ না কাটায় সড়কের কাজও বন্ধ হয়ে
আছে।
দীর্ঘ ৭-৮ মাস পূর্বে সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য সড়কের বিভিন্ন জায়গায় খোড়াখুড়ি শুরুর এক পর্যায়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে যাতায়াত ও পরিবহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। সড়কের পাশের গাছের অযুহাতে দীর্ঘ হতে থাকে সড়ক প্রশস্তের কাজ। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
সোনাপুর আবদুল্যাহ মিয়ার হাট-কালামুন্সী-শাহাজির হাট সড়কের ঠিকাদার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা ৫-৬ মাস আগে কাজটির ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছি। এরমধ্যে বন্যার কারণে কাজ শুরু করতে একটু সময় লেগেছে। এখন এই গাছগুলোর কারণে আমরা সড়কের সাইড ওয়ারিং করতে পারছিনা। আমরা
এলজিইডিকে জানানোর পরও তারা কোন সমাধান দিতে পারছেন না। যার
কারণে কাজে বিঘ্নিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর যে হারে দাম বাড়ছে, এভাবে কাজের সময় আরো বাড়লে আমাদেরকে অনেক বড় ক্ষতির সম্মূখিন হতে হবে। এলজিইডি নোয়াখালীর ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম
মতিন বলেন, নোয়াখালীতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দৈঘ্য ৯টি রাস্তা ৮ থেকে ৯ মাস আগে ঠিকাদাররা ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছেন এবং যথা নিয়মে ঠিকাদারগন কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু এই সড়কগুলোর ওপর বন বিভাগের গাছ থাকায় ঠিকাদাররা সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ করতে পারছেন না। এতে আমাদের
ঠিকাদাররা বার বার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে চাপ প্রয়োগ করেও কোন সমাধান মেলেনি।
তিনি বলেন, এখনি কাজ করার সময়, কিন্তু গাছগুলো না কাটায় সড়কের কাজ করা যাচ্ছে না। আমরা চায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সড়কের কাজ সমাপ্ত করতে এলজিইডি ঠিকাদারদের সহযোগিতা করছেন। তা না হলে, জনগনের পাশাপাশি ঠিকাদারগনও বড় ধরনের ভোগান্তি এবং ক্ষতির সম্মূখিন হবে।
এলজিইডি নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের তিনপি প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্তকরণে আমরা টেন্ডার দিয়েছি। অনেকগুলো রাস্তার ওয়ার্ক অর্ডার ৩ থেকে ৮ মাস হয়ে গেছে। কিন্ত সড়কগুলোর ওপর গাছ থাকায় প্রশস্তের কাজ করা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে বন ও পরিবেশের কমিটিতে আমি কথা বলেছি। কিন্তু গাছের জটিলতার কারণে ঠিকাদারকে আমরা সাইড বুঝিয়ে দিতে পারছি না। যার কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি বন বিভাগের সঙ্গে
সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, আমাদের এখানকার যেসকল রাস্তা সম্প্রসারণ বা রাস্তার উন্নয়ন কাজের জন্য গাছ কাটার জন্য আমাদের কাছে যে আবেদন এসেছে, উপজেলা এবং জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির অনুমোদন নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম টেন্ডারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি এবং এ বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্ধসঢ়;¦য় সভায় আলোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সড়ক উন্নয়নের পর নতুন করে গাছ লাগানোর দাবি তুলে এই মুহুর্ত্বে দুর্ভোগ নিরসনে এলজিইডি ও বন বিভাগের সমস্বয়ে চলমান সমস্যার সমাধান চান স্থানীয় বাসিন্দারা।
আপনার মতামত লিখুন :