প্রেমিকাকে কথা দিয়েছিলেন যুদ্ধ থেকে ফিরে বিয়ে করবেন। প্রতিশ্রুতি পেয়ে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেন প্রেমিকা। যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীর বেশে ফিরলেন। কিন্তু হারিয়ে ফেলেন তাকে। সেই আক্ষেপে সারাজীবন একা থাকার সিদ্ধান্ত নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তানেস উদ্দিন আহমেদ। প্রেমিকার ছবি বুকে নিয়ে কাটিয়ে দেন ৫৪ বছর। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকার ছবি বুকে নিয়েই চিরবিদায় নিলেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তানেস উদ্দিন। তিনি গজারিয়ায় উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।
তানেস উদ্দিনকে নিয়ে একাধিক টিভি চ্যানেল, জাতীয় পত্রিকা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ফুফাতো বোন জোহরার সঙ্গে প্রেম ছিল তার। তার সঙ্গে দেখা করতে প্রায়ই সন্ধ্যায় নৌকায় মেঘনা নদী পার হতেন। দেখা করে আবার ফিরতেন। একদিন সন্ধ্যায় তাদের দেখা করার কথা ছিল। পারাপারের জন্য নৌকা না পেয়ে সাঁতার কেটে মেঘনা পার হয়েছিলেন। এজন্য জোহরার বকাও খেয়েছেন। তাতে কী, সম্পর্কের গভীরতা দুজন ঠিকই বুঝেছিলেন।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের ডাকে সাড়া দেন তানেস উদ্দিন। কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলেন জোহরা। আপত্তি থাকলেও পরে সম্মতি দেন। এরপর কলকাতা-আগরতলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফেরেন তানেস উদ্দিন। যুদ্ধে অংশ নেন। এরই মধ্যে একদিন খবর পান জোহরা আর তার বাবাকে দুষ্কৃতীরা গুলি করেছে।
যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে তানেস উদ্দিন গ্রামে ফিরে আসেন। জোহরার স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোকাহত গজারিয়াবাসী। এদিন বাদ আছর উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ইসমানিরচর গ্রামে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়ে সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কোহিনুর আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও কোহিনুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তানেস উদ্দিন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। উনারা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।’দেশ রুপান্তর।
আপনার মতামত লিখুন :