মোঃ সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত চাউল বিতরণে সমন্বয়ক, স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে মতের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে বন্যার চাল নিয়ে ফেসবুক পোস্টে চাল চুরির অভিযোগ তুলেছেন এক সমন্বয়ক। ওই ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে।
সদর উপজেলা পিআইও অফিস সুত্রে জানা গেছে, বন্যা পরবর্তী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য কাদির হানিফ ইউনিয়নে প্রতিটি পরিবারের জন্য ৫ কেজি করে ২.০৫ মে.টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সমন্বয়ের মাধ্যমে চাল বিতরণের জন্য একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। ট্যাগ অফিসার ও সদর উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের কর্মকর্তা মো. আবু নোমান বলেন, ভিজিএফ চাল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে সুষ্ঠ ভাবে বিতরণের লক্ষ্যে গত বুধবার ৩০ অক্টোবর স্থানীয় কাদির হানিফ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৪৪ পরিবারকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাউল সংগ্রহের প্রস্তাব দেয় বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাউল বিতরণ করার প্রস্তাব দেয় ছাত্র সমন্বয়করা। এতে উভয়ের মধ্যে মতের অনৈক্য দেখা দিলে পরবর্তীতে রোববার (০২ নভেম্বর) সকালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে পুনরায় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায়ও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় বিএনপি, ছাত্র সমন্বয়ক ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ভিজিএফ চাল বন্টন করে সোমবার সকালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
তিনি বলেন, বন্যার্তদের মাঝে এই চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি, সুষ্ঠভাবে চাল বিতরণ হয়েছে। এদিকে ছাত্র সমন্বয়ক মুজাহিদ ইসলাম রাফসান চাল বিতরণ কার্যক্রমের সভার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জেলা ছাত্র সমন্বয়কদের জানালে রোববার সন্ধ্যায় জেলা ছাত্র সমন্বয়ক আরিফুল ইসলামের ফেসবুক আইডি থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যান আবদুর রহিম চৌধুরী ও ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক আবুল হোসেন বাহাদুরের বিরুদ্ধে চাল চুরির চেষ্টার অভিযোগ এনে একটি পোস্ট করেন। ওই ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
কাদির হানিফ ইউনিয় যুবদলের আহবায়ক আবুল হোসেন বাহাদুর বলেন, সরকারি ভিজিএফ চাউল বিতরণ কার্যক্রমে কোনভাবেই আমার সম্পৃক্ততা নেই এবং থাকার কথাও নয়। অথচ সম্পূন্ন উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন মিথ্যাচারের নিন্দা জানান এই যুবনেতা। কাদির হানিফ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ত্রাণের চাউলের পরিমান কম হওয়ায় আমরা বলেছি, এত অল্প পরিবারকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চাউল পৌঁছে দিতে গেলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। তাই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাউলগুলো বিতরণের পরামর্শ দিয়েছি। অথচ এই চাল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবদলের আহবায়ক আবুল হোসেন বাহাদুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে, যা অত্যান্ত দুঃখজনক।
কাদির হানিফ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহিম চৌধুরী বলেন, ভিজিএফ চাউলগুলো ইউনিয়ন পরিষদে রাখার পর তা বিতরণের জন্য ট্যাগ অফিসার, ছাত্র সমন্বয়ক ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। ওই মিটিংয়ে সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির অনৈক্য দেখা দিলে ট্যাগ অফিসার সমন্বয়ক ও বিএনপির নেতাদের মাধ্যমে (সোমবার) বন্যার্তদের মাঝে চাল বিতরণ করেন।
চাল চুরির চেষ্টার অভিযোগ প্রত্যাখান করে চেয়ারম্যান আবদুর রহিম চৌধুরী বলেন, চাউলগুলো ট্যাগ অফিসার ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এটা চুরি তো দুরের কথা ছুঁয়ে দেখারও সুযোগ নেই। সমন্বয়ক ও বিএনপির কথা কাটাকাটির জের ধরে এই মিথ্যা রটানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :