স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক : মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নিয়োগে অনিয়ম,দূর্নীতি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি চক্র নিয়োগ বাণিজ্য করেছে।
এই নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে নিয়োগ কমিটির সদস্য,পরীক্ষক ও ২ জন এমপি ও ১জন মন্ত্রীসহ সিভিল সার্জন অফিসের ৪ জন কর্মচারী ও ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি রেজাল্ট শিটে দেখা যায় পরিসংখ্যানবিদ,স্টোর কিপার,গাড়ি চালক,ক্লোড চেইন কনিশিয়ান,ল্যাবরেটরী এটেনডেন্ট ও অফিস সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক এই ৬টি পদে ১২ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় ১ম হয়ে কমলগঞ্জের রুবেল আহমেদ নিয়োগ বঞ্চিত হন আর ৩য় হওয়ার পরও শুধু টাকা জোড়ে গাড়ি চালক হিসেবে নিয়োগ পান শুভচন্দ্র পাল। স্বাস্থ্য সহকারী পদে ৭১ টি পদের মধ্যে (৯টি স্থগিত/বাতিল) নিয়োগ পেয়েছেন ৫৫ জন যারা চাহিদামতো ঘুষ দিতে পেরেছেন। ৪টি কোটায় নিয়োগ পান ২০ জন। অভিযোগ রয়েছে ভুয়া তথ্য দিয়ে অনেক প্রার্থী টাকার জোরে নিয়োগ পেয়েছেন।
জানা যায়- নিয়োগ পরীক্ষায় ৭টি ক্যাটাগরিতে ২০১৮ ও ২০২৩ সালে দু’টি পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে ৯৫টি পদের জন্য ২০ হাজার ৮ শ ৬৯ জন আবেদন করেছিলেন। এরমধ্যে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৮ হাজার ১৫৪ জন, উত্তীর্ণ হয়েছেন ৫৯৭ জন।
মৌখিক পরীক্ষা শেষে চলতি বছর-২০২৪ এর ১৬ জুলাই ৯৩ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয় (স্বাস্থ্য সহকারি ৩ টি পদ স্থগিত থাকে)। নিয়োগ প্রক্রিয়া,পরীক্ষা পর উত্তরপত্র ঠিকঠাক করে যে প্রার্থী চাহিদা মতো বড় অংকের টাকা দিতে পেরেছেন তারাই নিয়োগ পান এই অভিযোগ চাকুরী বঞ্চিতদের।
ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরও অকৃতকার্য হওয়ায় প্রার্থী ও স্বজনদের সন্দেহ হয়। তখন নিয়োগে অনিয়ম দূর্নীতি ও অস্বচ্চতা নিয়ে অভিযোগ তুলেন। চাকুরী বঞ্চিতরা বলেন যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে ওই প্রশ্নে আবারও পরীক্ষা নিলে তারা অকৃতকার্য হবেই। অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী অসিত চক্রবর্তী,হেড এ্যাসিটেন্ড কাম ক্যাশিয়ার রঞ্জনা দেবী,পরিসংখ্যানবিদ অহিজিৎ দাস রিংকু, ষ্টোর কিপার অলকচন্দ্র পাল ও সদর জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিতাংশ আচার্য্যসহ অন্যরা। এরা দীর্ঘ দিন থেকে একই অফিসে কর্মরত থাকায় দাপটের সাথে দূর্নীতি,ঘুষ ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ সকল অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে ওই নিয়োগ বাণিজ্যের যাবতীয় অপকর্ম করেছেন সিভিল সার্জন অফিসের ৪ জন,সদর জেনারেল ২৫০ শয্যা হাসপাতালের-১ জন,বিএমএর ১জন ও নিয়োগ বোর্ডের ৩ জন। আর তাদেরকে অনৈতিক কাজে সহায়তা করেন স্থানীয় ২জন এমপি,১জন মন্ত্রী ও বিএমএর নেতারা। দালালের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। তারা নিয়োগ কমিটিরসদস্যদের ম্যানেজ করে চাকুরী দেবার শর্তে অন্তত ৫০-৬০ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৫-৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। নিয়োগের পরও আরেক দফা পোস্টিং বাণিজ্য করেন সিভিল সার্জন অফিসের সংশ্লিষ্টরা।
বিগত ২০২৩ সালেও আউট সোর্সিং নিয়োগে এভাবে দূর্নীতি হয়েছিলো বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। ওই নিয়োগেও জড়িত ছিলেন সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা,কর্মচারী ও বিএমএর নেতারা। ওই সকল পদে চাকুরী প্রাপ্তরা ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
এ অনিয়ম সম্পর্কে নিয়োগ কমিটির সদস্য উপ-সচিব (স্বাস্থ্য-৬ শাখা) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মনিরা পারভীন ও সদস্য সচিব মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন মুর্শেদ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান নিয়োগ পরীক্ষা কোনো দূর্নীতি হয়নি। সরকারের সকল নিয়ম কানুন মেনে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :