অনুজ দেব, চট্টগ্রাম: [২] কোরবানির ঈদ ঘিরে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন হাটে পশুর সরবরাহ বাড়ছে। হাটগুলোতে এখনো ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। অল্পসংখ্যক পশু কেনাবেচা শুরু হলেও জমে ওঠেনি হাট। শুক্রবার বা শনিবার থেকে পুরোদমে কেনাবেচার আশা করছেন বিক্রেতারা।
[৩] বুধবার (১২ জুন) নগরীর কয়েকটি হাটে গিয়ে দেখা গেছে, সেগুলোতে ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। কিছুক্ষণ পরপর ট্রাক ও পিকআপ বোঝাই করে হাটে গবাদি পশু আনছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক পশুর চালান এখনো হাটে পৌঁছেনি। কিছু পথে রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে আরও পশুর সমাগম ঘটবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
[৪] এদিকে হাট শুরুর আগেই নির্ধারিত স্থানে গবাদি পশু রেখে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বিভিন্ন হাটে বেচাকেনা সেভাবে শুরু না হলেও উৎসুক ক্রেতারা বাজার ঘুরে দেখছেন। আগেই হাটে এসে দরদাম জানার চেষ্টা করছেন। সার্বিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছেন। মোবাইল ফোনে পশুর ছবি তুলছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ পছন্দও করছেন। কিছু হাটে অল্পসংখ্যক পশু বিক্রির কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা খামারগুলোতেও বেচাকেনা শুরু হয়েছে। পছন্দের পশু বাছাই করতে ক্রেতারা ভিড় করছেন এ খামারগুলোতে।
[৫] নুর নগর হাউজিং এস্টেট পশুর হাটের ইজারদার সাইফুল আলম আমাদেরসময়ডটকমকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু আসা অব্যাহত রয়েছে। বিক্রি তুলনামূলক এখনো কম। ঈদের দু-এক দিন আগে মূলত বেচাকেনা হয়। দুয়েকদিনের মধ্যেই হাটে কেনাবেচা জমে উঠবে বলে আশা করছি। পাবনা থেকে নুর নগর হাউজিং এস্টেট পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা কবির শেখ নামের নামের এক বিক্রেতা বলেন, ক্রেতার উপস্থিতি এখনও কম। যারা এসেছেন তাদের সাথে দরদাম মেলেনি। তবে বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার থেকে বাজার জমবে বলে আশা করছি।
[৬] ক্রেতাদের অভিযোগ, গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম একটু বেশি চাওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু বাজারে আসলেও দাম চড়া। ছোট থেকে মাঝারি আকারের একেকটি গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বেশি। তবে কয়েকদিনের মধ্যে আরও গরু আসলে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন তারা। ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, দর্শনার্থীরা পশুর দরদাম করছেন। পশু কিনছেন কম। শ্রমিক মজুরিসহ গোখাদ্যের দাম বাড়ায় পশুর দাম এবছর কিছুটা বাড়তি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
[৭] বিক্রেতারা বলছেন, শহরে কোরবানির পশু সাধারণত ঈদের এক থেকে দুইদিন আগে বেশি বিক্রি হয়। কোরবানির গরু রাখার স্থানের সংকটের কারণে শহরের বেশিরভাগ মানুষ শেষ সময়ে এসে কোরবানির পশু কেনেন। তাই শেষ সময়ে এসে বাজার জমে উঠবে।
[৮] জানা গেছে, এবার নগরে ৭টি অস্থায়ী ও তিনটি স্থায়ী হাটে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বসানো ৭টি অস্থায়ী পশুর হাট হলো কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় ও ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডের সিডিএ বালুর মাঠ। এছাড়া তিনটি স্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে- বিবির হাট গরুর বাজার, সাগরিকা গরুর বাজার ও পোস্তার পাড় ছাগলের বাজার। এর বাইরে জেলার ১৫ উপজেলায় বসবে আরও আড়াই শতাধিক হাট।
[৯] চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর জেলায় কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি। এরমধ্যে নগর ও ১৫ উপজেলার বিভিন্ন খামার ও বাসা-বাড়িতে কোরবানিযোগ্য পশু মজুদ আছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি। জেলায় ৩৩ হাজারের কিছু বেশি পশুর ঘাটতি থাকলেও আশপাশের জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ছাড়াও উত্তরাঞ্চল থেকেও খামারি ও ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য নিয়ে আসায় পশুর সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :