ফরিদপুর প্রতিনিধি: [২] বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর থার্ড অফিসার ফরিদপুরের তারেকুল ইসলাম। ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া তারেকুল গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা হাসিনা বেগম বুকে জড়িয়ে নেন তাকে। সকলের চোখেই আনন্দ অশ্রু।
[৩] তারেকুল দেড় বছর বয়সী একমাত্র কন্যা তানজিহাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করছেন। স্ত্রী নুসরাত জাহান জুথীর চোখে মুখে হাসি। স্বামীকে দেখতে পেয়ে কথা বলতে পারছিলেন না। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। তারেকুলের কোল থেকে নামছেই না মেয়ে তানজিহা। বইছে আনন্দের জোয়ার। চলছে নানা আয়োজন। তারেকুলকে দেখতে ভিড় করছেন আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী।
[৪] বুধবার (১৫ মে) সকাল ৬টা ১০ মিনিট। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে বড় ভাই হাসানের সাথে এসে পৌঁছালেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর থার্ড অফিসার তারেকুল ইসলাম।
[৫] তারেকুল বাড়িতে আসায় সকাল থেকেই নানা আয়োজন চলছে। তারেকুলের স্ত্রী আগে থেকেই কেক এনে রেখেছেন, সকলে মিলে কেক কাটলেন, একে অপরকে খাইয়ে দিলেন। রান্না করা হচ্ছে তারেকুলের পছন্দের চিতই পিঠা, মাংস। এছাড়াও গরুর মাংস, শোল মাছ সহ নানা পদের রান্না করা হচ্ছে।
[৬] তারেকুলের মা হাসিনা বেগম বলেন, আমরাতো এবার ঈদ করতে পারি নাই। আগেই বলেছিলাম ছেলে যেদিন বাড়িতে আসবে, সেই দিনই আমাদের ঈদ। আজ আমাদের ঈদ।
[৭] তিনি আরও বলেন, ছেলেকে কাছে পেয়ে কি যে ভালো লাগছে তা বোঝাতে পারবো না। নামাজ পরেছি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। ছেলের পছন্দের বিভিন্ন খাবার রান্না করছি। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীরা আসছে সকলেই খুবই খুশি।
[৮] তারেকুলের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, নামাজ পরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। ছেলে সুস্থভাবে বাড়িতে আসায় খুবই খুশি। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জাহাজ কোম্পানী সহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
[৯] তিনি আরও বলেন, ৬৫ দিন আমাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যখনই ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে তখনই আর ভাবতে পারি না।
[১০] তারেকুল ইসলাম জানান, জীবনের ওই কটা দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এখন অনেক ভালো লাগছে। ভেবেছিলাম হয়তো আর কোনদিন কারো সাথে দেখা হবেনা। আল্লাহর রহমতে বাবা মায়ের দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরে এসেছি। আমাদের উদ্ধারে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
[১১] তিনি আরও জানান, দুর্বিষহ দিন কেটেছে। কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হয়েছে। এরকম দিন যেন কারো জীবনে না আসে। তাপরও সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছি, অনেক ভালো লাগছে।
[১২] তারেকুলের স্ত্রী নুসরাত জাহান জুথী বলেন, অনেক খুশি, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তারেকুলের জন্য বিশেষ আয়োজন রয়েছে। আজকের দিনটি আমাদের ঈদের দিন।
[১৩] অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মো. তারেকুল ইসলাম। ছকড়িকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে চলে যান ঢাকায়। সেখানে মিরপুরের ড. মো. শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরিতে যোগ দেন।
[১৪] সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে যোগ দিয়েছিলেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে। পণবন্দি ২৩ নাবিকের মধ্যে ফরিদপুরের সন্তান তারেকুলও পণবন্দি হিসেবে জিম্মি ছিলেন।
[১৫] পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিয়ে করেন নাটোরের মেয়ে তৎকালীন মেডিকেলের ছাত্রী নুসরাত জাহান জুথিকে। বিবাহিত তারেকুল-জুথি দম্পতির এক বছর পাঁচ মাস বয়সী তানজিহা নামে একটি মেয়ে রয়েছে।
[১৬] গত বছরের ২২ নভেম্বর বাড়ি থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারেকুল। এরপর ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হন। ৬৪ দিন পর দেশের মাটিতে পা রাখেন। ১৫ মে দীর্ঘ ৫ মাস ২৩ দিন পর বাড়িতে ফিরলেন তারেকুল।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :