শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: [২] ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। ঠিক তাই গণমাধ্যমের কর্মীরাও। গণমাধ্যমের কর্মীরা সর্বদাই সংবাদের গন্ধ খুঁজতে থাকে। তারা এক জায়গায় সংবাদ পেলে নতুন জায়গায় খুঁজে বেড়ায়। যেন সংবাদ, সংবাদের উৎস খোঁজাই তাদের কাজ।
[৩] গত ৮ মে বুধবার কুমিল্লা থেকে আমরা এক ঝাঁক সাংবাদিক গিয়েছিলাম মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন কাভার করতে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ভোটার কেন্দ্রে না আসায় যখন নির্বাচনটি সাংবাাদিকদের কাছে এক ঘেঁয়েমী লাগছিল, ঠিক তখনি আমরা সিদ্ধান্ত নেই নোয়াখালী থেকে ঘুরে আসার। সাথে সাথে মাই টিভির মুসাসহ সবাই আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠে বলে, চলেন যাই। এ সময় কালবেলার আতিক ভাই, আমাকে বললেন, বজরা মসজিদটি দেখে আসার জন্য। যেই কথা সেই কাজ। যাত্রা শুরু করলাম, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার ঐতিহাসিক মোঘল স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন বজরা শাহী জামে মসজিদের উদ্দেশ্যে।
[৪] পথিমধ্যে আনোয়ারা স্মৃতি পাঠাগার ও দৃষ্টিনন্দন একটি বাড়ি দেখতে পাই। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ের পাশে বাড়িটি ফুল, ফলের গাছে ভরপুর। পুকুরের চারপাশে পরিকল্পিতভাবে তৈরি রিটার্নিং ওয়াল। বাড়িটির প্রবেশ পথে রয়েছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস গাঁথার তথ্যচিত্র। ট্যারাকোটায় রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীর সন্তানদের জীবন ভিত্তিক ছবি। মনোহরগঞ্জের নাথের পেটুয়া থেকে আট কিলো মিটার পর সরু রাস্তা অতিক্রম করে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা ঐতিহাসিক মসজিদটির ক্যাম্পাসে চলে আসি।
[৫] নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নে বজরা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদ দর্শনের এ বহরে আছেন আমাদের কুমিল্লার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শাহাজাদা এমরান, মাই টিভির আবু মুসা, দৈনিক বুড়িচং- ব্রাক্ষণপাড়া পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ আহাম্মদ লাভলু, মানবকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম তরুন, আমাদের কুমিল্লার স্টাফ রিপোর্টার জসিম চৌধুরী, সংবাদ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি মারুফ কল্প, রাইজিং বিডি অনলাইনের রুবেল মজুমদার, আমাদের কুমিল্লার স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান, কুমিল্লার জমিনের স্টাফ রিপোর্টার এম. হাসান, হৃদয় হাসান, আবির নিহাল প্রমুখ।
[৬] মসজিদে প্রবেশ করেই আমি, জসিম ভাই ও তরুণ দুইরাকাত নফল নামাজ আদায় করলাম। নামাজ পড়েই মনে হলো, বেশ প্রশান্তি অনুভব করছি।
[৭] মসজিদের ইমাম ও স্থানীয়দের সূত্র মতে, প্রায় ৩০০ বছর আগে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি। মোগল আমলে মুহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে ১৭৪১-৪২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন আমান উল্লাহ।
[৮] ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বজরা জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটি মেরামত করেছিলেন এবং সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সাজিয়ে ছিলেন।
[৯] মসজিদের গম্বুজ তিনটি। সেগুলো মার্বেল পাথরের তৈরি। মসজিদে প্রবেশের জন্য ধনুকাকৃতির একটি দরজা এবং কেবলার দিকে কারুকার্য খচিত মিহরাব রয়েছে। চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মসজিদটির প্রবেশ করার পথটি পূর্বদিকে। আয়তাকার মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের পূর্বে তিনটি, উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি দরজা রয়েছে। মসজিদের পূর্বদিকের মধ্যের দরজায় একটি ফারসি ফলকে এর নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম লেখা রয়েছে। মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব অত্যন্ত কারুকার্যময়। মসজিদের চারকোণে চারটি সুন্দর মিনার রয়েছে যা এর সৌন্দর্যকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।
[১০] মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান সিদ্দিকী জানান, বংশ পরম্পরায় আমার সাত পুরুষ এ মসজিদের খেদমত করেছে। ঐতিহ্যের মূল কাঠামো ঠিক রেখে, মসজিদের দক্ষিণ পাশে বাড়ানো হয়েছে। জুমার দিন কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজ পরেন। রক্ষণাবেক্ষণ কাজে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এ বিষয়ে সবার সহযোগীতা চাই। মসজিদে প্রবেশের সড়কটি আরো বড় করা দরকার। দূর-দূরান্ত মুসল্লিরা গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন না। ১৯৯৮ থেকে বাংলাদেশ প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে। মসজিদটি প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের সুরক্ষিত স্থানগুলোর তালিকাতেও রয়েছে।
এসবি২
