তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: [২] তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে ধান শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিনগর, সরাইল ও নবীনগরসহ অন্যান্য উপজেলার কৃষক, কৃষাণীরা। তাদেরকে সহযোগিতা করছেন পরিবার ছোট থেকে বড় অন্যান্য সদস্যরা। মাথায় ছাতা নিয়ে ধান নেড়ে দিচ্ছেন গৃহবধূ কৃষাণী। কৃষকরা জমি থেকে ধান এনে খলায় স্তুপ করে রাখছেন। সে সাথে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান মাড়াই যেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবার প্রাচীনতম পদ্ধতি ঘরের গরু দিয়ে ধান মাড়াই'য়ের কাজ চলছে। এই যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্য হাওরের কৃষকদের ঘরে সোনালী ফসল ধান উঠানোর কর্মযজ্ঞ।
[৩] সে সাথে কৃষকদের ঘরে থাকা গবাদি পশুর জন্য অনেকে খড়ও শুকিয়ে রাখছেন। এসব কাজ করতে ধান শুকানোর খলায় খলায় (ধান শুকানোর উঠান) কৃষক পরিবার গুলোর অক্লান্ত পরিশ্রম করা দৃশ্য চোঁখে পড়েছে।
[৪] সরেজমিনে জেলার হাওর অঞ্চল সরাইলের পাকশিমুল, পরমান্দপুর ও নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট, কুন্ডা ও গোর্কণ এলাকায় ঘুরে দেখা যায় খলায় খলায় (ধান শুকানোর উঠান)। কৃষকরা নিজেসহ শ্রমিক দিয়ে জমি থেকে কেটে আনছেন ধান, দিচ্ছেন স্তুপ। আবার অন্যদিকে চলছে মাড়াই ও সিদ্ধের কাজ। তারপর খলায় ছড়ানো হচ্ছে সে ধান। কৃষাণীরা প্রচন্ড রোদ্রের তাপ উপেক্ষা করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ধান শুকানোর কাজ করে যাচ্ছেন।
[৫] কথা হয় পাকশিমুল এলাকার কৃষক ছিদ্দিক মিয়ার সাথে, তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ফলন ভাল হয়েছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি নেমে যেতে পারে। পানি চলে আসতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ধান শুকিয়ে ঘরে তুলতে চাই। এ রকম রোদও হয় তো আর পাওয়া যাবে না। এমন রোধ থাকলে আর এক সপ্তাহ, দশ দিনের মধ্যে হাওরের সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
[৬] আরেক কৃষক শফিক উদ্দিন বলেন, গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো আমরা বিশ্বাস করি ধানেই মান। জীবনের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত কৃষি কাজ করেই জীবন কাটাচ্ছি। নিজের জমিতে যারা ধান চাষ করেন তারা বেশি লাভবান হবেন। যারা বর্গাচাষী তাদের লাভ একটু কম হবে। তবে লাভ হবেই। সঠিকভাবে ধান চাষ করলে জমিতে লাভ আছে। এখন খলায় আমাদের সারাদিন কাটে। তবে শ্রমিক মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। আমরা কৃষি নির্ভয় পরিবার। তাই সোনালী ফসল ধান কাটা ছাড়া বাকি কাজ গুলো পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই করে থাকি।
[৭] জেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর বোরো চাষের আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। নতুন বিভিন্ন জাতের ধান চাষে কিছুটা সফলতাও দেখা যাচ্ছে। কৃষকরা লাভবান হবেন। এ পর্যন্ত ৭০% শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আর অল্প কয়কদিন এই রকম আবহাওয়া থাকলে কৃষক ভালোভাবেই ধান তুলতে পারবেন।