মাসুদ আলম: শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য, পানি সম্পদ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পদ্মা সেতুর কোয়ালিটির বিষয়ে কোনো ধরনের কমপ্রোমাইজ করা হয়নি। আমি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলাম, আমি বিষয়টা জানি।
তিনি বলেন, যত ধরনের দুর্যোগ হতে পারে, আমরা সব মাথায় রেখেই সেতু নির্মাণ করেছি। পদ্মার মতো নদীতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে। কত জোরে আঘাত হানতে পারে, সেগুলো মোকাবিলা করবার মতো সক্ষমতা তৈরি করেই আমরা সেতু নির্মাণ করেছি।
আইনুন নিশাত বলেন, পদ্মা অত্যন্ত শক্তিশালী একটি নদী। যখন এর প্রশস্ততা কমে, তখন গভীরতা বাড়ে। মাওয়া এলাকায় এসে নদীর প্রশস্ততা যেমন কমেছে, তেমনই গভীরতাও বেড়েছে। নদীর ধর্ম বুঝে, তারপর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুতে আমরা ৭০ ফুট পর্যন্ত ড্রেজিং করেছি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্রেজিং মেশিন এনে ড্রেজিং করেছি। এটি এতটা সহজ নয়। পদ্মা সেতু আমরা যখন তৈরি করি, তখন আমরা মাছের কথা চিন্তা করেছি। মাছ যাতে ভয় না পায়, এজন্য আমরা শব্দ নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যামারগুলোর একটি ব্যবহার করেছি। কিন্তু তারপরও আমরা শব্দ নিয়ন্ত্রণ করেছি।
তিনি বলেন, প্রত্যেকেটা প্রকল্প বাস্তবায়নের পেছনে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকে। কারণ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না। বিশ্বব্যাংক যে বিরোধিতা করেছে, তার পেছনে রাজনৈতিক কারণ ছিলো। ‘যমুনা সেতু যারা করেছে, আমরা তাদের প্রি-কোয়ালিফাই করিনি। কারণ পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো সক্ষমতা তাদের ছিলো না।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগ উপেক্ষা করে, বাধা-বিপত্তি জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক লাইফ লাইন রূপে কাজ করবে। সেখানে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সেতুতে রেল যোগাযোগ চালু হলে ঢাকা থেকে কলকাতায় সংযোগ চালু হবে, যাতে বাড়বে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পবিপ্লব ঘটবে।
শুধু বাণিজ্যিক নয় আর্থসামাজিক উন্নয়নে পদ্মা সেতু অবদান রাখবে জানিয়ে স্পিকার বলেন, আমরা জানি অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বরিশালে ১০ ভাগ দরিদ্র বেশি। এটা কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে পদ্মা সেতু। যোগাযোগ উন্নয়নের ফলে সেখানকার কৃষকরা তাদের ফসলে বাজারমূল্য পাবে। এতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে তাদের।
এছাড়াও সেমিনারে আলোচনা করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম, অর্থনীতিবিদ ড. এম খালিকুজ্জামান, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :