শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৭ মে, ২০২৩, ০৫:৩৩ বিকাল
আপডেট : ২৭ মে, ২০২৩, ০৫:৩৩ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টোলের আওতায় আসছে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড

এম আর আমিন, চট্টগ্রাম: ফৌজদারহাট-বায়েজিদ ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ লুপ রোডকে টোলের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এটা হবে সিডিএ’র প্রথম টোল আদায় করা সড়ক। ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের কাজ শেষ করতে সড়ক ব্যবহারকারীদের থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে ব্যয় মেটাতে যাচ্ছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএ'র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর না করে নিজেরাই রক্ষণাবেক্ষণ করবে। আর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, লাইটিংয়ের খরচ এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনার ব্যয় মেটাতে সড়কটিকে টোলের আওতায় আনা হচ্ছে।

ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ না হলেও ২০১৯ সালের পর থেকে যান চলাচল শুরু হয়। তবে এখনো শেষ হয়নি সড়কের সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ। ২০১৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭২ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার পাশাপাশি ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২০ কোটি টাকা। পরে ২০১৮, ২০২০ ও ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করা হয়। 

এরপর ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটির ডিপিপি সংশোধন করে মেয়াদ ও ব্যয় দুটিই বাড়ানো হয়। নতুন করে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর পর প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৫৩ কোটি টাকায়। ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দিলেও বর্ধিত খরচের টাকা জোগানে সায় দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে প্রকল্পের সবশেষ বর্ধিত ব্যয়ের এই অর্থ টোলের মাধ্যমে আদায় করবে সিডিএ।

সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৬টি পাহাড় কাটে সিডিএ। যার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানাও করে সিডিএকে। ফলে খাড়াভাবে কাটা পাহাড়ের কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি চুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের মতামতও নিয়েছে সিডিএ। এখন ঝুঁকিমুক্তভাবে পাহাড় কাটা ও মাটি ভরাটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে লাগবে ১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। রেলওয়ের আপত্তির মুখে আটকে থাকা সেতু নির্মাণেও নকশাগত পরিবর্তন আনা হয়। ফলে সেতুর নির্মাণ খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণের শুরুতে কিছু এলাকায় নালা-নর্দমা নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমে থাকছে। এখন নতুন করে নালা নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার সড়কটি রাতের বেলায় পুরোটাই থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা এবং হচ্ছে ছিনতাই। এ রোডে এলইডি বাতি স্থাপনে বাড়তি খরচ হবে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। এছাড়াও পাহাড়ের ঢাল স্থিতিশীল করতে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণে অতিরিক্ত লাগবে সাড়ে ১০ কোটি টাকা ও সড়ক নির্মাণে বাড়তি খরচ হবে আরও ৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের শুরুতে পরামর্শক ব্যয় সাড়ে ৪ কোটি টাকা থাকলেও তা বেড়ে হয়েছে এখন সাড়ে ৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বাড়তি খরচ প্রায় ৮৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, যেহেতু প্রকল্প সংশোধনের কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে, তাই প্রকল্পের সড়ক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে টোল নেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্মাণ কাজ শেষ করতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা। আমরা মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত ডিপিপি পাঠালে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই অনুমোদন দিয়েছে কিন্তু ব্যয়টা আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে করতে বলা হয়েছে। তবে সিডিএর ফান্ডে এরকম খরচ করার কোন টাকা নেই, সে কারণে ডিপিপিতে টোল আদায়ের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সেটা অনুমোদনও দেয়। টোল আদায়ের জন্য চলতি মাসেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

সংশোধিত ডিপিপির নথি অনুযায়ী, এই সড়ক দিয়ে চলতে হলে মোটরসাইকেলকে টোল দিতে হবে ১০ টাকা। তিন চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ১৫ টাকা। প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা, পিকআপ ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৮০ টাকা। এছাড়া এ রোডে বড় বাস চলাচলে ১০০ টাকা, চার চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে ১২০ টাকা এবং ছয় চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা টোল দিতে হবে। কাভার্ড ভ্যান চলাচলে সবচেয়ে বেশি ২০০ টাকা টোল দিতে হবে।

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়