হাইওয়ে পুলিশের নজরদারিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বড় পরিবর্তন আসছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন হাইওয়েতে ১ হাজার ৪০০ আধুনিক ক্যামেরা বসানো হয়েছে, যার মাধ্যমে এখন থেকে শুধু গতি নয় বরং সড়কের প্রতিটি অনিয়ম ধরা পড়বে রিয়েল টাইমে। এমনকি ওভারস্পিড থেকে শুরু করে যে কোনো সড়ক লঙ্ঘনের জরিমানা ডিজিটালি ফাইল করা হবে, আর সেই তথ্য সরাসরি গাড়ির মালিকের মোবাইলে পৌছে যাবে।
বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দি ও ঢাকা-মাওয়া সড়কের ভাঙ্গা পয়েন্টে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপরারেশন) হাবিবুর রহমান।
হাবিবুর রহমান বলেন, কয়েক মাসের মধ্যে ওভার স্পিডসহ যে কোনো আইন লঙ্ঘনের জরিমানার তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির মালিকের মোবাইলে পৌঁছে যাবে। আদালতে ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল প্রমাণও সংরক্ষণ করা হবে, যা সড়ক নিরাপত্তায় নতুন মানদণ্ড তৈরি করতে চলেছে।
ডিআইজি জানান, মূল মহাসড়কে নজরদারি বাড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম বৃত্তের বাইরে পর্যন্ত বিস্তৃত একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল মনিটরিং নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ক্যামেরা সক্রিয় আছে, যা হাইওয়ের প্রায় প্রতি ইঞ্চি
কভার করছে।
ডিজিটাল জরিমানার নতুন পদ্ধতি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি জানান, হাইওয়ে পুলিশ আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে জরিমানার পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল করার টার্গেট নিয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় ক্যামেরা ওভার স্পিড, সিগন্যাল ভায়োলেশন বা যেকোনো সড়ক অপরাধ শনাক্ত করবে। সেই তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির নম্বরের সঙ্গে যুক্ত মালিকের মোবাইলে যাবে। বার্তায় জানানো হবে কোথায়, কী কারণে এবং কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নির্দিষ্ট ব্যাংকে অনলাইনে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, এখন আর পুলিশের হাতে ধরে ফাইন দেওয়ার দিন শেষ। পুরো প্রক্রিয়াটাই ডিজিটালভাবে চলবে।
গতি নয়, সন্দেহজনক আচরণও নজরদারিতে থাকবে উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, নতুন ক্যামেরাগুলোর কার্যক্ষমতা শুধু প্রাইভেটকার, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ সকল যানবাহনের গতি শনাক্ত করার মধ্যে সীমিত নয়। সেগুলো মুভমেন্ট অ্যানালাইসিস, ক্রাউড ডিটেকশন ও সন্দেহজনক আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
এ সময় তিনি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ ও টাইম-স্ট্যাম্পড ডেটা আদালতে স্বীকৃত ডিজিটাল এভিডেন্স হিসেবে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান। ডিআইজি বলেন, আদালতে এখন থেকে মানুষের মুখের কথার চেয়ে ডিজিটাল প্রমাণের শক্তি বেশি হবে। এতে মামলা জেতা কঠিন হবে না।
বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক (সদর) এ এস এম আহম্মেদ খোকন হাইওয়ে পুলিশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস তো মালিক চালায় না, চালায় চালক। অনিয়ম করলে জারিমানা টাকা মালিকের মোবাইল ফোনে আসবে ভালো উদ্যোগ, তবে তিনি চান শতভাগ স্বচ্ছতা। কিন্ত পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতার দাবি, জরিমানার তথ্যের সঙ্গে অনিয়মের একটি ছবি যাতে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয়। তাতে মালিক জানতে পারবে চালক কতটা দায়ী। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির হাজি মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার বলেন, এ কার্যক্রম শুরু হলে চালকরাও সতর্ক থাকবে। পাশাপাশি অপরাধীদের শনাক্ত করাও সহজ হবে।
উল্লেখ্য, মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জাতীয় মহাসড়কে (ক্যাটাগরি এ) প্রাইভেটকার, এসইউভি, মাইক্রোবাস, বাস, মিনিবাসসহ অন্যান্য হালকা যানবাহন সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরির জন্য সীমা হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। জাতীয় সড়কে (ক্যাটাগরি বি) গাড়ি, বাস ও মিনিবাসের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার, বাইকের জন্য ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরির জন্য ৪৫ কিলোমিটার। জেলা সড়কে গাড়ি, বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, বাইক ৫০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ও আর্টিকুলেটেড লরির ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র: ইত্তেফাক