শিরোনাম
◈ নারায়ণগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে আইভী ◈ ‘মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যের’ জবাব দিলেন আসিফ নজরুল ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার রিপোর্ট দাখিল সোমবার ◈ জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায় : ডা. জাহিদ ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল ◈ যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়, নিরাপত্তা জোরদার, বাড়তি সতর্কতা ◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ ◈ অনিশ্চয়তার মাঝেও পি‌সি‌বি চায় বাংলাদেশ দল পাকিস্তান সফরে আসুক

প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:৫১ দুপুর
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০২:৫১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেড়েছে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, কমেছে যাত্রীসংখ্যা

ঐতিহ্যের টানেই টিকে আছে টমটম গাড়ি

টমটম গাড়ি

অপূর্ব চৌধুরী: আধুনিকতার মাঝে এখনো টিকে আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী টমটম গাড়ি। তবে পুরনো সেই বাহারি আমেজ নেই টমটমের। পরিবহনের আধিক্য, যানজট, ঘোড়া রক্ষণাবেক্ষণে মাত্রাতিরিক্ত খরচসহ বিভিন্ন কারণে কমেছে টমটম গাড়ির প্রচলন। তবে ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে অনেকেই এখনো টমটম গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। 

জানা যায়, ১৮৩০ সালে পুরান ঢাকায় সর্বপ্রথম ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। জমিদারি বাহনের পাশাপাশি এটি সেসময় আর্মেনীয়দের ব্যবসার মালটানার কাজেও ব্যবহৃত হত। এরপর নবাবি শাসনামলে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা  বাড়তে থাকে। তবে এখন নবাবি ও জমিদারি শাসন না থাকলেও পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের সাথেই মিশে আছে টমটম তথা ঘোড়ার গাড়ি। 

তবে বিগত কয়েক বছর ধরে নিজস্ব জৌলুশ হারাচ্ছে টমটম গাড়ি। টমটমের সাথে সংশ্লিষ্টদের দাবি সদরঘাট-গুলিস্তান রোডে আগে শতাধিক ঘোড়ার গাড়ি চললেও এখন মাত্র ২৫-৩০টি গাড়ি চলাচল করছে। আগের তুলনায় এখন পরিবহন বেশি হওয়ায় এবং রাস্তায় মাত্রাতিরিক্ত যানজট থাকায় যাত্রীরা ঘোড়ার গাড়িতে কম চড়েন। আবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে প্রতিটি ঘোড়া রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার খরচও বেড়ে গেছে। এতে করে কম আয়ের বিপরীতে বেশি হচ্ছে খরচ। আগে প্রতিদিন ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হলেও এখন ৮০০-১০০০ টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতিদিন মালিকের জমার টাকা উঠাতেই হিমশিম খেতে হয় বলে দাবি কোচোয়ান ও হেল্পারদের। এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন হারিয়ে যাবে বলে শঙ্কা তাদের। তাই এই সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে ঘোড়ার পরিচর্যা খরচ কমানোর পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান তারা।

রোববার পুরান ঢাকার বাংলাবাজার ফুটওভার ব্রিজের নিচ থেকে গুলিস্তান যাবার জন্য যাত্রীদের ডাকছেন কোচোয়ান ও হেল্পাররা। তবে দীর্ঘক্ষণ হাক ডাকের পর যাত্রীদের তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছেন না তারা। সদরঘাট-গুলিস্তান যাওয়ার ভাড়া ৩০টাকা। প্রতিটি ঘোড়ার গাড়িতে মোট ১৫টি আসন থাকলেও ৫-৭ জন হলেই গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে গাড়িগুলো। এতে করে দিনশেষে  আর্থিক দৈন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে।  অনেকে আবার যাত্রী না পেয়ে গাড়ির ভেতরেই বিশ্রাম নিচ্ছেন। একই চিত্র দেখা যায় গুলিস্তান থেকে সদরঘাটে আসার ক্ষেত্রেও। ঘোড়ার গাড়িতে চড়া যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যবয়সী ও বয়স্ক। তরুণদের তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তই চলাচল করছে ২৫-৩০টি টমটম গাড়ি। আগে প্রতিদিন ৫-৬টি ট্রিপ মারতে পারলেও এখন প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩-৪ টি ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ট্রিপশেষে মালিকের জমার টাকা দিয়ে দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা পাচ্ছেন বলে দাবি কোচোয়ান ও হেল্পারদের। যাতে করে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের। মমিন উদ্দীন নামের এক কোচোয়ান বলেন, এখন যাত্রী পেতে লড়াই করতে হয়। আগে যাত্রী পাওয়া যেত পর্যাপ্ত। তাই সিরিয়াল অনুযায়ী গাড়ি চলতো। এখন কোন সিরিয়াল নেই, যে যখন পারছে তখনই ছেড়ে যাচ্ছে যাত্রী নিয়ে। দিনশেষে মালিকের জমার টাকা ঠিকই দিতে হয়। কিন্তু আমরা নামমাত্র মজুরি নিতে পারি। আগে ৫০০-৬০০ টাকা মজুরি নিতে পারতাম সব খরচ মিটিয়ে এখন ২০০-৩০০ টাকা পাই। পুরান ঢাকার স্থানীয় লোকজনই এখন তুলনামূলক বেশি চড়েন ঘোড়ার গাড়িতে।  এই কোচোয়ান বলেন, প্রতিটি গাড়িতে একজন চালকের সাথে একজন হেল্পার থাকে। এখন যেই পরিস্থিতি তাতে দুইজনেরই টানাপোড়েন যায়। আমার বাবাও এই পেশার সাথেই যুক্ত ছিলেন। উত্তরসূরী হিসেবে আমিও এটাতেই যুক্ত ৮ বছর ধরে।

ঘোড়ার গাড়িতে চড়া পুরান ঢাকার বাসিন্দা আবু সিদ্দীক বলেন,একসময় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ঘোড়ার গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন দিন পাল্টেছে। ঘোড়ার গাড়ির আগে বাস গুলিস্তানে চলে যায়। মানুষ সময় বাঁচানোর জন্য বাসেই যায়। আমি অনেক আগে থেকেই ঘোড়ার গাড়িতে চলাচল করি। একটা আকর্ষণ তৈরী হয়েছে। এজন্য এখনো মাঝে মধ্যেই ঘোড়ার গাড়িতে চড়ি। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়