আল আমীন : নিত্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের কৃষি পর্যায়ে বিপ্লব সাধন করে যাচ্ছে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা তার মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় ও উন্নয়নশীল নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করছে তারা। এবার মৎস্য শিল্পে যোগ হলো নতুন মাত্রা, যার সমস্ত কৃতিত্ব বিশ্বিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের প্রফেসর ড. এ কে এম নওশাদ আলমের।
তিনি মাছ থেকে বিভিন্ন মুখরোচক ও উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ফিশ বল, ফিশ ফিঙ্গার, ফিশ রোল, ফিশ সমূচা, ফিশ বার্গার, বাউ মচমচে মাছের আচার, বাউ মাছের পাউডার, ইত্যাদি তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ থেকে বিভিন্ন খাবার উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাত করে ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠিত YPA Agro Tech এর সাথে একটি MOU স্বাক্ষরিত হয়।
ইতোমধ্যেই ওয়াই-পা এগ্রো টেক তাদের উৎপাদন শুরু করেছে এবং ময়মসিংহ শহর সহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের ফ্রোজেন আইটেম হোম ডেলিভারি শুরু করেছে । ক্যাম্পাসের কেআর মার্কেট, লালন চত্বর এ তাদের YPA SNACKS BAR নামে ভ্রাম্যমাণ দোকানে মাছের তৈরি এই প্রোটিন সমৃদ্ধ ও মুখরোচক খাবার সমুহ পরিবেশন করে যাচ্ছে।সংখ্যাপ্রতি পাঁচ টাকা থেকে বিশটাকা দরে বিক্রি করছে তৈরিকৃত এই খাবারগুলো। এরইমধ্যে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতর তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই মূখরোচক খাবার সমুহ।
প্রযুক্তি উদ্ভাবক প্রফেসর ড. এ কে এম নওশাদ আলম বলেন 'গবেষণাগারে আমরা মাছের চর্বিকে স্থিতিশীল করে কম দামি মাছ থেকে নানা পুষ্টিকর ও উপাদেয় জনপ্রিয় খাবার বানিয়েছি। কিশোরগঞ্জ হাওর অঞ্চল ছাড়াও আরও বেশ কিছু এলাকায় রিকশা ভ্যান ভিত্তিক এরকম অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। যারা গ্রামপর্যায়ে ভালো ব্যবসা করছে। কমদামি মাছে মূল্য সংযোজন করা হলে মাছের মূল্য বাড়বে। ফলে মাছচাষিরা বেশি দাম পাবে এবং মাছের আহরণউত্তর ক্ষতি কমবে।"
YPA AGRO TECH এর প্রধান উদ্যোক্তা মারুফ বিল্লাহ বলেন 'আমি দীর্ঘদিন থেকে নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি তরুণদের উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সম্মানিত শিক্ষকের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তির মাঠ পর্যায়ে বিস্তার এর মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অনেকাংশেই অর্জন সম্ভব। পাশাপাশি খুব সহজেই মানুষের মুখে, স্বল্প মূল্যে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার তুলে দিতে পারবো। এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে উৎপাদিত মানসম্মত পণ্য মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই একটি প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন করেছি। প্লান্টে উৎপাদিত পণ্য আমাদের ভ্রাম্যমাণ আউটলেট গুলোতে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি বাকৃবি ক্যাম্পাসসহ শহরে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে হোম ডেলিভারি দেয়া হয়।'
তিনি আরো জানান, ওমিক্রণ সংক্রমণ শুরুর আগে একটি আউটলেট এ মাত্র দুই ঘন্টার দোকানিতে প্রতিদিন গড়ে চার/পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হত। কিন্তু ওমিক্রণের কারনে কিছু বিধি-নিষেধের জন্য বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে বারোশো থেকে পনেরশো।
ক্যাম্পাসের লালন চত্বরে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র শাকিব জানান , "মাছ নিয়ে এধরনের কাজ আমাদের দেশে খুবই কম । পুষ্টিগুণ ও স্বাদ বিচারে এটি খুবই ভাল একটি উদ্যোগ। মাছের তৈরী এই আইটেমগুলো আমাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের আরেক ছাত্র জানান, " আমরা আগে বিকেলের নাস্তা হিসেবে বাইরের অন্যান্য খাবার খেতাম এখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিনিয়র ভাইদের উদ্যোগে এরকম একটি আউটলেট হওয়াতে আমরা খুবই আনন্দিত এবং নিয়মিত এখান থেকে আমরা বিকেলের নাস্তা নিয়ে যাই।"