শিরোনাম
◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে? ◈ এবার থাইল্যান্ড থেকে ভারতগামী বিমানে ১৬ টি সাপ, এরপর যা ঘটল ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্তা

প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ০১:৫২ রাত
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ০১:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আরিফ মাহবুব: দুঃখ-শোকে ‘জয় বাংলা’ আমাদের শক্তি যোগায়

আরিফ মাহবুব
বিজয়ের মাসে ধর্মনিরপেক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ৭২ এর সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে পতপত করে উড়ছে রাষ্ট্র ধর্মের পতাকা। বিজয়ের চেতনায় ১৯৭১ সালের বিজয়ের মাস ১৬ ডিসেম্বরের থেকেই জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র আর সমাজতন্ত্রের পতাকা পতপত করে উড়ছিলোও, জাতীয় পতাকা বিক্রির উৎসব শুরু হয়েছে বটে, কিন্তু সংবিধানের এক বেহাল অবস্থা। বাংলাদেশ তার জন্মলগ্নে ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের প্রাণের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। আমাদের একটি সংবিধানও তৈরি করা হয় ঠিক সেই একই আলোকে। একটি দেশ যেটার সমাজ ব্যবস্থা হবে সমাজতান্ত্রিক পরিবেশে, মানুষের মাঝে থাকবে গণতন্ত্রের চর্চা আর আমরা হবো বাঙালি। তারপর এসব কিছুর অন্তরালে সংবিধানে জায়গা করে নিয়েছে রাষ্ট্র ধর্ম, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে শরিয়া আইন এখন দাপটের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সংবিধানের আনাচে কানাচ, এরপর কী হবে সেটা আমাদের কারওই জানা নেই। এখানে আমি পাÐিত্য জাহির করতে আসিনি, সত্য কথাগুলোই বলতে এসেছি, আজ ধর্ম নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ধর্ম ব্যবসা শুরু করেছে, ধর্মনিরপেক্ষতা আজ সুশীল রাজনৈতিক ভাষা, ধর্ম হচ্ছে রাজনীতিতে টিকে থাকার ঢাল, তার একটাই কারণ বাংলাদেশের মানুষ দারুণভাবেই ধর্মভীরু। আমরা নিজেরাই ধর্মীয় শিক্ষায় নিজেদের আলোকিত করতে পারিনি। মক্তবে মাদ্রাসায় আমরা ধর্মীয় শিক্ষা নিয়েছি অনেকটা অশিক্ষিত ধর্মান্ধ মোল্লাদের কথা শুনে, জুমার খুতবা শুনে, কই আমাদের তো বাংলায় কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়নি, বিভিন্ন আয়াতের তর্জমা আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরা হয়নি, কেউ তো আমাদের বুঝিয়ে বলেনি ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।
দেশের শিক্ষা নীতিমালায় ধর্মীয় শিক্ষা হচ্ছে একটি ধারা, কেউ কি কখনো প্রশ্ন করেছি সেই শিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে চলছে? কতোটুকু বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও মানবতা সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত? বিগত ৫০ বছরে অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের কী শিখিয়েছে, এসব ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ৫০ বছরে কী পরিমাণ ধর্মান্ধ মেধাবী ছাত্র বেরিয়েছে? খুবই সুকৌশলে বিভিন্নই উগ্রপন্থী ধর্মীয় সংস্থাগুলো এই অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গি তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করেছে তার হিসাব আমাদের কারও কাছেই নেই, কতো ছাত্রছাত্রীর মগজ ধোলাই হয়েছে? খুব সজাগ দৃষ্টি নিয়ে যদি লক্ষ্য করেন আমাদের জাতীয় অনুপ্রেরণা জয় বাংলা শব্দটা আজ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগ, যেকোনো অনুপ্রেরণায়, আনন্দে, উল্লাসে, দুঃখে, শোকে জয় বাংলা আমাদের শক্তি যোগায়, আজকাল জাতীয় পর্যায়ের ভাষণ আর বক্তব্যেও জয় বাংলা ¯েøাগানটি শুধু শোভা বর্ধনের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে জয় বাংলা দিয়ে আমাদের ৭২ এর সংবিধানের শুরু। জয় বাংলা কি হারিয়ে যাচেছ, কী করে যে মনের ভাষা প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না, আসলে আমরা কোথায় চলেছি? ৭১-এর পর সর্বদলীয় শাসন ব্যবস্থার দাবি নিয়ে জাসদের উৎপত্তি, সেই থেকেই শুরু দ্ব›েদ্বর, আসলে কাজের মাঝে ধর্মনিরপেক্ষতা যেটার ওপর দৃষ্টি দেওয়ার কথা ছিলো সেটা ছিলো সর্বদাই উপেক্ষিত, পৃথিবীতে মানুষ ধর্ম পালন করবে সেটা তার নাগরিক অধিকার কিন্তু কথা ছিলো রাষ্ট্র ও সংবিধান থাকবে ধর্মের ঊর্ধ্বে, ধর্ম হবে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়, আমরা কি সত্যি পেরেছি ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করতে? না পারিনি কারণ বিভিন্ন ছুঁতোয় রাজনৈতিক দলগুলো ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেছে, ধর্মকে ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে।
ধর্মীয় উন্মাদনা থেকে একটি দেশকে উদ্ধার করতে হলে, একটি শিশুকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরি করতে হলে, যোগ্য নাগরিক হিসেবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের কি কিছুই করণীয় নেই। সামান্য একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবো প্রতিটি অভিভাবক তাঁর সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরি করতে কী পরিমাণ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কিন্তু হায় কতোজন অভিভাবক জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই স্বপ্নকে সার্থক করতে পেরেছেন? প্রশ্ন আসতে পারে এক্ষেত্রে কার ভ‚মিকা কতোটুকু, সরকারের করণীয় কী? নাগরিক দায়িত্ব কতোটুকু? ধর্ম এ বিষয়ে কী বলছে? এতো সব চিন্তা করতে গেলে সত্যি আমাদের সবার যখনই পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় ঠিক তখনই আমাদের সেই চিন্তার শূন্যস্থান পূরণ করতে খুবই নীরবে ধর্ম তার জায়গা করে নেয়। আসলেই কি ধর্ম এসব জটিল সমস্যার সমাধান দিতে পারে? ধর্ম কি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা এনে দিতে পারে? সন্তান মানুষ করতে গেলে যে অক্লান্ত পরিশ্রম, শিক্ষা, আর জ্ঞানের প্রয়োজন হয় বাস্তবতার দৃষ্টিতে ধর্ম কি তার সমাধান দিতে পারে? তার একমাত্র সমাধান হচ্ছে নাগরিক ও সমাজ ব্যবস্থার যৌথ সমন্বয়ে এটি সুন্দর ও সঠিক পথকে বেছে নেওয়া আর এক্ষেত্রে আমাদের ও সরকারের যৌথ পরিকল্পনা নিয়ে একত্রে এগিয়ে আসতে হবে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই সুন্দর সমাজ আর সুস্থ ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ। অসুস্থ রাজনীতি অসুস্থ সমাজ তৈরি করে সেই অসুস্থ সমাজে মানবতা ও মানবিক মূল্যবোধ হ্রাস পেতে থাকে। আমাদের মনের অজান্তেই দিনে দিনে একটি জাতি হিসেবে তার মানবিক চেতনাবোধকে হারিয়ে ফেলে, তখন মানুষই মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলাটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরে নেয়, ধর্মান্ধরা উন্মাদের মতো ধর্মীয় কুসংস্কারের আবেগে কখন যে জঙ্গি হয়ে ওঠে তা আমরা নিজেরাই টের পাই না, সামাজিক অবক্ষয় থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হলে, একটি সুন্দর সমাজ তৈরি করতে এখনি পদক্ষেপ না নিলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। হয়তোবা অনেক দেরি হয়েও গেছে। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়