শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর, ২০২১, ০২:০৮ রাত
আপডেট : ২৫ নভেম্বর, ২০২১, ০৫:১২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাশিয়ার বাজির সাইটে বাংলাদেশি জুয়ার সিন্ডিকেট, পাঁচ জেলায় জুয়ার শতাধিক এজেন্ট

আখিরুজ্জামান সোহান: আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্রিকেট ও ফুটবলের টুর্নামেন্টসহ জনপ্রিয় খেলা ঘিরে বিদেশি বেটিং বা বাজির ওয়েবসাইটে চলছে জুয়ার রমরমা কারবার। সেই জুয়ায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। রাশিয়ান তিনটি সাইট বাংলাদেশে গড়ে তুলেছে নিজস্ব সিন্ডিকেট।

গ্রাম পর্যায়ে জুয়া খেলা ছড়িয়ে দিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিক্রয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে এজেন্ট সিমকার্ড নিয়ে লেনদেন চালাচ্ছেন তাঁরা। ক্রিকেটের আইপিএল, বিগব্যাশ এবং ফুটবলের লালিগার ম্যাচে জুয়ার এই কারবার চলছে সবচেয়ে বেশি।

রাশিয়ায় অবস্থান করে মোস্টবেট (mostbet-bd.com) সাইট চালাচ্ছেন আল আমিন, আশিকুর রহমান ও নাঈম ওরফে হাল্ক নামের তিন যুবক। ওয়ানএক্সবেট (1xbetbd.com) সাইটটি পরিচালানার জন্য বাংলাদেশে একজন কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং একজন এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে। ‘রেডি’ নামের একটি বিশেষ অ্যাপে এজেন্টদের যোগাযোগ এবং ‘ম্যানেজমেন্টডটআইও’ নামের অ্যাপে চলছে কারবারের হিসাব। একটি মোবাইল ব্যাংকিং কম্পানির তিন বিক্রয় কর্মকর্তার মাধ্যমে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গায় অর্ধশত এজেন্ট সিমকার্ড নিয়েছে চক্রটি। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও কক্সবাজারেও একই রকম এজেন্ট আছে।

এসব নম্বরে প্রতিদিন জুয়ার পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। একই রকম কারবারের তথ্য পেয়ে বেট৩৬৫ (bet365bd.com) নামের আরেকটি সাইটে নজরদারি করছেন সাইবার গোয়েন্দা সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মোস্টবেট ও ওয়ানএক্সবেটে সংশ্লিষ্ট দুই মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনজন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্তকারীরা বলছেন, প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ যুবক তিনটি সাইটে ঢুকছে। বড় ম্যাচে এই সংখ্যা কয়েক লাখে পৌঁছে যায়। জুয়ার টাকা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে রাশিয়ায়। মোবাইল ব্যাংকিং থেকে তুলে হুন্ডির মাধ্যমেও পাচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনসহ (বিটিআরসি) প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে মূল সাইটের কাছাকাছি নাম দিয়ে মিরর বা বিকল্প সাইট খুলে রাখা হচ্ছে। যেকোনো একটি ক্লিক করলেই মূল সাইটে চলে যাচ্ছে জুয়ারিরা।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, ‘আমরা দুটি বেটিং সাইট পেয়েছি, যেগুলো রাশিয়া থেকে পরিচালিত হলেও দেশে এজেন্ট আছে। দিনে একটি বেটিং সাইটে এক থেকে দেড় লাখ ব্যক্তি জুয়ায় অংশ নেয়। ওয়ানএক্সবিডি সাইটের এজেন্টরা চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর নগদের বিজনেস এজেন্ট নম্বর নিয়ে সেখানে লেনদেন করছেন। এখানে ডিপো ম্যানেজার ও এসআর যুক্ত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে বিকাশ, রকেটসহ আরো কিছু মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের মাধ্যমে জুয়ার টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মোস্টবেটের সঙ্গে রাশিয়ায় থাকা বাংলাদেশির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ওয়ানএক্সবেটেও দেশে নিজস্ব এজেন্ট আছে। তাদের অবস্থান কোথায় তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

রাশিয়ান সাইট চালাচ্ছেন যাঁরা : সিআইডি সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে দেশে মোস্টবেট সাইটটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এতে বিডি যুক্ত করে এজেন্ট নিয়োগ দেন রাশিয়ান অংশীদার মূল ওনাররা। সাইটটিতে নজরদারির পর তদন্তকারীরা দেখেন, মোস্টবেটের সঙ্গে বিডি ছাড়াও আরো কিছু বর্ণ যুক্ত করে মিরর সাইট তৈরি করে রাখা হয়েছে। যেকোনো একটি ক্লিক করলেই মূল সাইটে চলে যাওয়া যাচ্ছে। একটি বন্ধ করা হলে আরেকটি সক্রিয় দেখা যায়। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও আশপাশের এলাকা এবং ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে এই সাইটে বেশি হিট হচ্ছে। বিটকয়েন, লিটকয়েন, রিপলসহ বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়াও বিকাশ ও নগদে জুয়া খেলা হচ্ছে এই সাইটে। গত ১৭ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে আরিফ হোসেন, রাব্বি হাওলাদার, রিয়াদ হাসান নামের তিন এজেন্টসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের সবার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে। পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লিখিত তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে তাঁরা জানান, আরিফের বড় ভাই আল আমিন রাশিয়ায় লেখাপড়া করতে গিয়ে জুয়ার সাইটের কারবারে যুক্ত হন। একইভাবে আশিকুর রহমান ও নাঈম ওরফে হাল্ক নামের দুই যুবকও রাশিয়ায় সক্রিয়। তাঁদের নিয়ে আল আমিন মোস্টবেট সাইটের ‘বিডি’ অংশে দেশে তাঁর সহযোগীদের দিয়ে কারবার শুরু করেছেন। রাব্বি বাংলাদেশের প্রধান এজেন্ট। হাকিম নামের একটি বিকাশ এজেন্টসহ সাতটি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট এবং দুজনের পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ২০ লাখ টাকার লেনদেন এবং প্রায় ২০ কোটি টাকা রাশিয়ায় পাচারের তথ্যও পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

সূত্র মতে, মোস্টবেটের তদন্ত করতে গিয়ে মেহেরপুরে যুবকদের মধ্যে অনলাইন জুয়া ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পায় সিআইডি। দেখা যায়, ওয়ানএক্সবেট সাইটে জুয়ার লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং নগদে। এই চক্রের প্রধান এজেন্ট মাহফুজুর রহমান নবাবকে স্ত্রীসহ ১৩ নভেম্বর কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরো সাতজনকে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ‘রেডি’ নামের অ্যাপে এজেন্টদের যোগাযোগ এবং ‘ম্যানেজমেন্টডট আইও’ নামের অ্যাপে থাকছে ব্যবসার তথ্য।

নগদ কর্মীদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটে জড়ানোর অভিযোগ : সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, মেহেরপুরের ওয়ানএক্সবেট সাইটের জুয়ার লেনদেন যেসব নগদ অ্যাকাউন্টে হচ্ছে সেগুলো চুয়াডাঙ্গার নামে বরাদ্দ করা। এমনকি যাঁর নামে নগদ বিজনেস অ্যাকাউন্টের সিমকার্ড তিনি সেটি ব্যবহার করছেন না। ব্যবহার হয় না কোনো দোকানেও। তদন্তে দেখা গেছে, নবাব ছাড়াও স্বপন মাহমুদ, আসলাম উদ্দিন, মুরশিদ আলম লিপু জুয়ার লেনদেনে জড়িত। শিশির মোল্লা নামের একজন বিক্রয়কর্মীকে জুয়ায় ব্যবহৃত নগদের সিম সরবরাহ করেন চুয়াডাঙ্গা ডিপোর ব্যবস্থাপক নাজমুল হক সুমন। তিনি পলাতক আছেন। মেহেরপুর ডিপোর ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম ও কর্মী শিপন এসব সিমকার্ড দিয়ে কারবারে যুক্ত হন। সূত্র জানায়, ওয়ানএক্সবেট সাইটে কেরানীগঞ্জের আনিস মোহাম্মাদী একজন বড় এজেন্ট। এখনো অধরা থাকা এই ব্যক্তি ‘আনিস ভাই’ বা ‘দুবাই ক্লাব’ নামে সক্রিয়। আনিস মোহাম্মাদী বেটিং জগতে বিগম্যান হিসেবেও পরিচিত।

তদন্তকারীরা জানান, এলাকায় জানাজানি হলে কয়েক মাস আগে মেহেরপুরের মুজিবনগরের বাড়ি থেকে কক্সবাজারে গিয়ে বসবাস শুরু করেন বড় এজেন্ট নবাব। কলাতলী এলাকায় বড় ভাড়া ফ্ল্যাটে স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলিকে নিয়ে সংসার শুরু করেন তিনি। ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে তিনি সম্প্রতি গাড়িও কিনেছেন। গ্রেপ্তার করা গেলেও তাঁর কারবার ও সম্পদের তথ্য পাননি তদন্তকারীরা। সূত্র: কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়