মোহাম্মদ এ আরাফাত
পাকিস্তানের দালালদের পরবর্তী প্রজন্ম এখনো বাংলাদেশি হয়ে উঠতে পারেনি। বাংলদেশের সঙ্গে যে পাকিস্তানের একটি আলাদা ইকুয়েশন আছে এটা তারা এখনো মানতে পারে না। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শোষণ-শাসন, মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা ও লক্ষাধিক নারীর সম্ভ্রমহানীর বাস্তবতায় বাংলাদশের ক্ষেত্রে পাকিস্তান দেশটার সাথে পৃথিবীর আর কোনো দেশেরই তুলনা আসতে পারে না সেটা ভারতই হোক চীনই হোক বা আমেরিকা।
অথচ আটকে পড়া পাকিস্তানিগুলো এখনো পাকিস্তানের চশমাই পরে আছে। বাংলাদেশের একজন মানুষ পাকিস্তানবিরোধী হতে পারে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কারণেই, ভারতের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই-রাজাকার শাবকগুলো তা মানতে পারে না। কারণ তাদের মস্তিষ্কে বাংলাদেশ নেই, আছে পাকিস্তান। যে কারনে তারা বাংলাদেশ-পাকিস্তান ইকুয়েশনের মধ্যে সবসময় ভারতকে টেনে আনে। এই রাজাকার শাবকগুলোকে কে বোঝাবে, যারা পাকিস্তানবিরোধী তারা আসলে স্বাধীনতার পক্ষশক্তি ও দেশপ্রমী এবং দেশপ্রমীরা দেশের স্বার্থে ভারতসহ অন্য কোনো দেশকেই ছাড় দেয় না।
[২] ‘পাকিস্তানের দালাল’ বনাম ‘ভারতের দালাল’ : ১৯৭১ সালে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ‘আইয়ুব খান-ইয়াহিয়া খান’ ও তাদের দালাল রাজাকার-গোলাম আযমরা স্বাধীনতার সময় থেকেই এ দেশের মুক্তিকামী মানুষদের বিতর্কিত করার সবরকম চেষ্টা করেছিলো আর এর সবচেয়ে বড় উপাদান ছিলো আওয়ামী লীগকে রুশ-ভারতের দালাল বলে আখ্যা দেওয়া। এরই ধারাবাহিকতায় এখনো পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের চোখে আওয়ামী লীগ ভারতের দালাল। কারণ পাকিস্তান ও তাদের এদেশীয় দালালরা মনে করে ভারতের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে, সেই আওয়ামী লীগ কেন অন্য কোনো দেশের দালালি করবে? তাহালে তো পাকিস্তানের দালালি করে, আপোস করে, ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে পারতো। আসলে বাংলাদেশে ভারতের দালাল বলে কিছু নেই। এ দেশে যদি কোনো দালাল থেকে থাকে, সেটা পাকিস্তানের। আর তারাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে ও বাংলাদেশপন্থীদের ভারতের দালাল বলে অপপ্রচার করে। ১৯৭১ সালেও পাকিস্তান ও তাদের এদেশীয় দালালরা মুক্তিযোদ্ধাদের ‘ভারতের দালাল’, ‘ভারতের চর’ -এসব কথা বলে অপপ্রচার করতো। যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে তারা দেশপ্রেমী হয়, তারা অন্য দেশের দালালি করতে পারে না। যারা দেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে দালালি করেছে তারাই আসল ও প্রমাণিত দালাল।
সত্য কথা হলো, পাকিস্তানের দালালরা নিজেদের দালালিকে ডিফেন্ড করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষের মানুষগুলোকে ‘ভারতের দালাল’ হিসেবে কাল্পনিকভাবে সামনে এনেছে- কারণ তাঁদের একটা পাল্টা পক্ষ তৈরি করতে হয়, তাঁদের অপরাজনীতি চালিয়ে যাবার জন্য। দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কারোরই যাওয়ার কথা না, কিন্তু ১৯৭১ সালে যারা দেশের বিরুদ্ধে গিয়েছিলো তারা ছিলো পাকিস্তানের দালাল, রাজাকার। রাজাকার গং হচ্ছে দেশবিরোধী একটা প্রতিষ্ঠিত সত্তা। এই রাজাকারের পরবর্তী প্রজন্মও জন্ম নিয়েছে এবং তারাই পাকিস্তানের বিজয়ে এতো উল্লাসিত হয় এবং পরাজয়ে এতো কষ্ট পায়।
লেখক: চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন