মোতাহার খান, শ্রীপুর প্রতিনিধি: যৌতুক লোভী স্বামীর দেয়া আগুনে ঝলসে গেছে নারীর হাত-পা। ঝলসানোর ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছেন তিনি। মামলা হলেও গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্তরা। প্রভাব শালীদের দিয়ে চাপ দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে । হুমকি দিচ্ছে মামলা না তুললে ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে। আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় আতংকে আছে বাদীর পরিবার। নির্মম নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরনল গ্রামে।
নির্যাতিত নারী বরমী ইউনিয়নের পাঠানটেক গ্রামের মো. জাকির হোসেনর মেয়ে জান্নাতুল ফেদৌস জেমি। মামলায় অভিযুক্তরা হলো,নির্যাতিত নারীর স্বামী মেহেদী হাসান পলাশ,শাশুরী তাছলিমা,ভাসুর .রাজু মিয়া,জ্যা শাবনুর,ননদ রিতা। অভিযুক্তরা উপজেলার বরনল গ্রামের মৃত আ.হামিদ সরকারের স্ত্রী,ছেলে ও মেয়ে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্ক ছিল পলাশের সাথে জেমির। তিন বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় তাদের। কিছুদিন যাবৎ পলাশ যৌতুকের জন্য জেমিকে চাপ দিয়ে নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জেমির বাবা পলাশকে ব্যবসা করতে দুই লাখ টাকা দেয়। ওই টাকা পলাশ নয়ছয় করে শেষ করে ফেলে।
সম্প্রতি পলাশ ও তার পরিবারের লোকজন মিলে তিন লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে জেমিকে শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতনশুরু করে। কথায় কথায় মারধরকরে অভিযুক্তরা। জেমির মা শিরিনা আক্তার স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
দুই নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টারদিকে পলাশ তার মা,ভাই,বোনদের নিয়ে জেমিকে তিনলাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে চাপ দেয়। এসময় পলাশ অন্যদের সাথে নিয়ে জেমিকে এলোপাথারী ভাবে মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায়ে দিয়াশলাই দিয়ে জেমিকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পড়নের জামা কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। জেমি দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে আগুন নেভায়। আগুনে তার ডান পা এবং বাম হাত মারাত্মক ভাবে ঝলসে যায়।
খবর পেয়ে জেমির মা রাতেই পলাশদের বাড়ি যায়। অগ্নিদগ্ধ জেমিকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায়। পলাশ ও তার বাড়ির লোক জন জেমি ও তার মাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। দুই তিন ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর জেমির মা কৌশলে ৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনা জানায়।
৯৯৯ এর ফোনপেয়ে রাত বারটারদিকে শ্রীপুর থানা পুলিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন কে সংগে নিয়ে তাদের উদ্ধার করে । রাতেই জেমিকে শ্রীপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। এঘটনায় জেমি বাদী হয়ে ৪ নভেম্বর শ্রীপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামী পলাশ সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
জেমির মা শিরিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন,ঘটনার পরথেকেই পলাশের লোকজন মামলা না করতে হুমকি দেয়। মামলা করার পরথেকে পলাশ স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে মামলা না তুললে জেমিকে আপহরণ করে খুনকরে ফেলবে। ঘটনার দশদিন পরও কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। আসামী পক্ষের হুমকির মুখে মেয়েকে নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় আছেন তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.মামুনুর রশিদ জানান, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক আছে। শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন,আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। খুব দ্রুই তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :