গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
আমি আজ পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠানে আচরণগত সৌজন্যের চ‚ড়ান্ত অভাব পেয়েছি তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দারোয়ান থেকে শুরু করে প্রধান শিক্ষক পর্যন্ত এই অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যতো নামী তার আচরণের রুক্ষতা ততো বেশি। এই অভিজ্ঞতা আমার বিগত দশ বছরের, একজন ছাত্রের অভিভাবক হিসেবে। স্কুলে গেলে নিজেকে মনে হয় একজন পুত্রদায়গ্রস্ত পিতা। এজন্য পারতপক্ষে ছেলের স্কুলে আমি যাই না। সম্প্রতি গিয়েছিলাম নতুন একটি স্কুলে। প্রধান শিক্ষকের দরজায় দাঁড়িয়ে বললাম, ‘আসতে পারি?’ তিনি আসতেও বলেননি। আমি তাঁর নীরবতা উপেক্ষা করে ভেতরে ঢুকলাম। নিজের পরিচয় দিলাম। বসতেও বলেননি। আমি বসে পড়লাম। কী আর করবো! দরকারি কথা সেরে চলে এলাম। পুরো আলাপচারিতায় সুআচরণের কোনো চিহ্ন নেই। যেন আমি চাকরি চাইতে এসেছি। ভাবলেশহীন মুখে ‘চাকরি নেই’ বলা ছাড়া তার আর কাজ নেই।
আমাদের সময় বাবা-মায়েরা যখন স্কুলে যেতেন শিক্ষকরা তাদের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে বসাতেন। স্কুলের বাকি ছাত্রদের মধ্যেও চাঞ্চল্য তৈরি হতো ‘উজ্জ্বলের আব্বা আসছে।’ আব্বা মাঝে মাঝে স্যারদের জন্য কেক, বিস্কুট, ফল কিনে নিয়ে যেতেন। স্যারেরা চা আনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কেউ আবার ভাববেন না আমি চা খেতে চেয়েছি। ওই আশা আমি করি না। বোধহয় ঢাকা শহরের রীতিই এটা। প্রতিটি অভিভাবকই এখানে সন্তানদায়গ্রস্ত। মন ছোট করে এখানে ঢুকতে হয়। আমি সম্মান পেলাম না সেটা হয়তো সামান্য বিষয়। কিন্তু আমার আশঙ্কা হলো, আমাদের ছেলেমেয়েরা কী শিখছে? এই যে আমাদের অনেকের ছেলেমেয়েরাই সামাজিক সৌজন্যের অভাব ও কাউকে রিসিভ করার ক্ষেত্রে জড়তা দেখায় এটা কি এসব স্কুল থেকেই শেখা? বি.দ্র. ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। লেখক : রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ